জাতীয়

নবান্ন উৎসব।নগরীতে বাঙালি ঐতিহ্যের ছোঁয়া

ইটভাটা শহুরে সকালে হালকা শীত অনুভূত হলেও গ্রামীণ এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে দেখা যায়। প্রকৃতি বলে দিচ্ছে শীত এসেছে। বৃদ্ধির এই সময়ের পাশাপাশি সোনালী ফসল এখন দিগন্তে। মার কার্তিতে ক্ষুধার যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে গ্রামবাংলার মানুষ এই সময়ে মঙ্গা জয়ের স্বপ্ন দেখে প্রাচুর্যের ধানে। প্রাণ জেগে ওঠে নতুন ধানের গন্ধে। এ আনন্দে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন গৃহিণীরা।

রাজধানীতে গ্রামবাংলার এই লোকজ উৎসবের আয়োজন করে তরুণ প্রজন্মকেও গ্রামীণ পটভূমিতে নিয়ে যেতে চান সংস্কৃতিসেবীরা। যেখানে তরুণরা জানতে পারবে বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদ ২৪তম ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব ১৪২৯’-এর আয়োজন করেছে।

গতকাল বুধবার সকালে সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে বাঁশির ধ্বনিতে শুরু হয় উৎসব। আয়োজক কমিটির সদস্য মানজারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নাভান্ন উৎসবকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। সকালে গান, কবিতা ও নাচের তালে নগরবাসী অংশ নেয়। দিনব্যাপী একই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নাচ-গান-সংগীতের মধ্যে উৎসবের মঞ্চে ছিল নবান্ন বক্তৃতা পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবান্ন উৎসব বাঙালিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে। বাঙালির জনজীবনে নিয়ে আসে অনন্ত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা। তিনি মনে করিয়ে দিলেন, একান্নবর্তীর সংসারে বিপর্যস্ত। ছোট বাটিতে ভাত ও চালের গুঁড়া রান্নার স্মৃতি ভোলার নয়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ শহিদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, নবান্ন উৎসব গ্রামবাংলার বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী উৎসব। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, তরুণদের কাছে ঐতিহ্য ও শেকড়ের কথা বলতে চাই, শেকড়ের কাছে নিয়ে যেতে চাই।

উদযাপন পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসানের লিখিত বাণী পাঠ করেন সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। পরিষদের আরেক সহসভাপতি কাজী মদিনার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।

এসময় কাউন্সিলের সহ-সভাপতি হাসিনা মমতাজ, মাহমুদ সেলিম ও মানজার চৌধুরী সুইট, সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান সুজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফরোজা হাসান শিল্পী, কোষাধ্যক্ষ শাহরিয়ার মোতালেব, প্রকাশনা সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ ও প্রচার সম্পাদক তৌহিদ জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল বাহারি পিঠার স্টল। এছাড়া উৎসবে আগত অতিথিদের জন্য ছিল খই, মুড়কি, মোয়া ও মুড়লি খাবারের ব্যবস্থা।

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসংগীত, নৃত্য, কবিতা ও পিঠাপুলির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে নবান্ন উৎসব। বুধবার সকালে নবান্নের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে চারুকলা বিভাগের প্রতিষ্ঠানে। ‘নবান্নের নতুন ধানে, হাসি ফুটুক সক প্রাণে’ স্লোগানে চারুকলা বিভাগের ছাদে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। বজলুর রশীদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ।

তিনি বলেন, ‘বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবতার জন্য এই উৎসবগুলো খুবই প্রয়োজন।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ইমাম হোসেন

মন্তব্য করুন