ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি
থমথমে আন্দোলন জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। রমজান ও ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মাঠে নেমেছে দলটি। সরকার পতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার প্রস্তুতি চলছে। মাসব্যাপী জেলাভিত্তিক এ কর্মসূচি চলবে ঈদুল আজহা পর্যন্ত। ঈদের পর রাজধানীকে কেন্দ্র করে এক দফা কর্মসূচি দেবেন তারা। এসব কর্মসূচির ‘ওয়ার্ম আপ’ হিসেবে শনিবার ঢাকায় বিশাল সমাবেশসহ শোডাউন করবে রাজপথের বিরোধী দল। এখান থেকে সারাদেশে নিজেদের অবস্থান জানাতে চান নেতাকর্মীরা। সমাবেশ সফল করতে কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতিমূলক সভা ও কর্মশালা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। আজকের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের শরিক ও শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শীঘ্রই গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করবে।
জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে সর্বাত্মক নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে দলটি। তাদের মতামত নিয়ে আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করছে বিএনপির হাইকমান্ড। চলমান আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সমর্থন আদায়ের কৌশল যেমন রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর যৌক্তিকতা তুলে ধরা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই চলছে কূটনৈতিক মহলে। অন্যদিকে আন্দোলনের সময় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা, সমর্থন ও পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দলটির সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। বুধবার সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই দিন দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরাও বৈঠক করেন। দুই-একদিনের মধ্যে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ আন্দোলনকে নিজেদের অস্তিত্ব, জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করছেন বলে জানান দলটির নেতারা। তাই যখনই মাঠে নামবেন, পূর্ণ শক্তি নিয়ে আন্দোলনকে সফল করতে চান। তারা সরকারের প্রলোভনে বা প্ররোচিত না হয়ে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামতে চায়। তারা যেভাবে আন্দোলনকে এতদিন সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন, সেভাবেই চূড়ান্ত আন্দোলনে সফলতা চান। এরই অংশ হিসেবে ২০ মে থেকে মাঠে নামবে বিএনপি ও যুগপথের জোট। নতুন কর্মসূচি হিসেবে এবার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। ঢাকা অভিমুখে কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে এই সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চেতনা ফিরিয়ে আনতে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো এই জেলা সমাবেশগুলো করতে চায় বিএনপি ও জোট।
জানা গেছে, প্রতি শনিবার ১০টি বিভাগের একাধিক জেলায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিটি সমাবেশে সাংগঠনিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সব জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে আবারও তৃণমূলে শোডাউন করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তবে এ কর্মসূচি নিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর চাপ বাড়বে। সমাবেশের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। সেক্ষেত্রে দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে এই কর্মসূচি হতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক সিনিয়র নেতা।
গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ১৯ জেলায় সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পর বুধবার রাতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারিক রহমান। সেখানকার অধিকাংশ নেতাই সব জেলায় সমাবেশ করার পক্ষে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক জেলায় কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
দলটির নেতারা জানান, ঈদুল আজহার আগেই জেলা পর্যায়ে শোডাউনের কর্মসূচি শেষ করতে চায় দলের হাইকমান্ড।