দ্বিগুণ রপ্তানিতে স্যুট ব্লেজারে সুদিন
বাংলাদেশ বহু বছর ধরে সাধারণ ভোক্তাদের উপযোগী মৌলিক পোশাক রপ্তানি করে আসছে। উচ্চমূল্যের ফ্যাশনেবল পোশাক উৎপাদন ও সরবরাহকারী দেশের তালিকায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও। ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পাশাপাশি টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ট্রাউজার, ফরমাল শার্ট, আধুনিক স্যুট ও ব্লেজারও এখন রপ্তানি হচ্ছে। ১৫০ থেকে ৮০০ ডলারের মূল্যের স্যুট এবং ব্লেজারও রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে, কাপড়, রং, স্টিচিং এবং ফিনিশিংয়ে নিখুঁত উচ্চ-মূল্যের স্যুট এবং ব্লেজার এখনও রপ্তানির মূলধারায় প্রবেশ করেনি। তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ে পণ্যটির অবদান প্রায় এক শতাংশ। ১৩টি কোম্পানি স্যুট ও ব্লেজার তৈরি ও রপ্তানি করে। চীন, জাপান এবং তুরস্ক এখনও স্যুট এবং ব্লেজারের বাজারের একটি বড় অংশ ধরে রেখেছে।
সাধারণ পোশাকের তুলনায় দ্বিগুণ রপ্তানি: স্যুট এবং ব্লেজারের বৈশ্বিক বাজার এখন ১৬০ বিলিয়ন ডলারের মূল্যের। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ এক বিলিয়ন ডলারেরও কম। স্যুট ও ব্লেজারের বিশ্ববাজারের মূলধারায় এখনো যোগ দিতে না পারলেও বাংলাদেশ থেকে এর রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসে পোশাক খাতের সব পণ্যের গড় বৃদ্ধি, স্যুট ও ব্লেজার রপ্তানি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। ওই সময়ে ৩১ মিলিয়ন ডলারের স্যুট ও ব্লেজার রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি বেড়েছে ৩২ শতাংশ। এ সময়ে সামগ্রিকভাবে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশেরও কম। গত অর্থবছরে মোট স্যুট ও ব্লেজার রপ্তানি হয়েছে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছর ছিল ৩৬ মিলিয়ন ডলারের মতো। অর্থাৎ এক অর্থবছরে বেড়েছে ১০ কোটি ডলার।
অনেক উদ্যোক্তা বলছেন, সম্ভাবনা অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট নয়। সরকার ও উদ্যোক্তারা বারবার পোশাকে বৈচিত্র্য আনার কথা বলছেন। স্যুট ও ব্লেজারের রপ্তানি কেন বেশি হারে বাড়ছে না জানতে চাইলে উদ্যোক্তারা প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিশেষ ছাঁচে ব্লেজার তৈরি করতে হয়। এ ধরনের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও শ্রমিক প্রয়োজন। বাংলাদেশে এর ঘাটতি রয়েছে। চীনা প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় কয়েকটি কারখানা চলছে। ভালো ফিনিশিংয়ের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন। একটি স্যুট এবং ব্লেজার কারখানায় একটি সাধারণ পোশাক কারখানার তুলনায় অনেক বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে এবং নতুন বিনিয়োগ করতে পারেন না। তবে কিছু উদ্যোক্তার ভিন্ন মত রয়েছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, শুরুতে স্যুট ও ব্লেজারের সম্ভাবনা তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ ফ্যাশন দুনিয়ায় ফ্যাশনেবল ফরমাল পোশাকের চাহিদা কমছে। ভোক্তারা এখন কাজ করতে যেতে চান তারা যে পোশাক পরে বেড়াতে যান। এ কারণে তাদের চাহিদা বাড়ছে। বরং, এই পণ্যগুলি কতটা ফ্যাশনেবল এবং মূল্য সংযোজন করা যায় সেদিকেই ফোকাস করা হয়। বিশেষ করে সিনথেটিক ফাইবারের টি-শার্ট, পোলো শার্ট, জ্যাকেট এখন বিশ্বব্যাপী চাহিদা। বৈশ্বিক পোশাকের বাজারের ৭৫ শতাংশ এখন এই ধরনের সিন্থেটিক ফাইবার দ্বারা দখল করা হয়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় আনুষ্ঠানিক পোশাকের প্রয়োজন হয় না। গৃহবন্দী ব্যক্তিদের নৈমিত্তিক পোশাক পরতে হয়। এ কারণে তিন বছর ধরে ওভেনের চেয়ে নিট রপ্তানি বেশি হয়। ২০২২ সালে, নিট রপ্তানি ওভেনের তুলনায় ৩.৭২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো, নিট রপ্তানি ওভেনকে ছাড়িয়ে গেছে।
১০ ধরনের স্যুট এবং ব্লেজার: স্যুট এবং ব্লেজারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু দুটোর মধ্যে একটা বড় পার্থক্য আছে। একটি সম্পূর্ণ স্যুটে সাধারণত কোট, কোমর কোট এবং প্যান্ট থাকে। স্যুট মানে কোটের মতো একই রঙের এবং ফ্যাব্রিকের প্যান্ট। ব্লেজারের ক্ষেত্রে তা একেবারেই নয়। ডেনিম, গ্যাবার্ডিন বা যেকোনো কাপড়ের প্যান্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন ব্লেজার। এমনকি হাইনেক গেঞ্জিও চালু রাখা যেতে পারে। ব্লেজার সংখ্যায় এক টুকরো। ব্লেজারের কাপড় তুলনামূলকভাবে মোটা। রপ্তানির পাশাপাশি স্যুট ও ব্লেজারের অভ্যন্তরীণ বাজারও বাড়ছে। জারা-জেসিপেনি স্যুট এবং ব্লেজারও কয়েক বছর ধরে রাজধানীর অভিজাত শপিং মলে পাওয়া যাচ্ছে। আবার দেশে তৈরি পণ্য স্থানীয় বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। যেমন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কম দামের স্যুট এবং ব্লেজার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। তবে ১০০% রপ্তানিমুখী ব্লেজারের সাথে এই স্যুট এবং ব্লেজারগুলির মানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। রেডিমেড স্যুট ও ব্লেজার ছাড়াও অভিজাত টেইলারিং শপেও এগুলো তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে ১০ ধরনের স্যুট ও ব্লেজার রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ছেলেদের স্যুট ও স্পোর্টস পোশাক। এই বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে সিন্থেটিক ফাই রপ্তানি থেকে।