• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    দেহে বাঁধা থাকে ফেনসিডিল হাতে স্টিয়ারিং ।পরিবহন শ্রমিকের আড়ালে মাদক বহন

    দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের চালক হেলাল উদ্দিন এবং সুপারভাইজার মঈদুল খান। ঢাকা-পাবনা রুটে বাস চলে। হেলাল তার পেটের চার পাশে স্কচটেপ দিয়ে ফেনসিডিলের বোতল আটকে রাখেন। এভাবে তিনি পাবনা থেকে বাসে ঢাকায় আসেন। ফেনসিডিল ড্রাইভিং সিটের নিচে এবং বাসের বিভিন্ন স্থানে পাশাপাশি শরীরে রাখা হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে চালক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) নাগালের বাইরে। এ সুযোগে চালকের পেছন পেছন তিনি পাবনা থেকে ঢাকায় ফেনসিডিল নিয়ে আসছিলেন।

    তবে এবার রক্ষা পাননি হেলাল ও মৃদুল। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত সোমবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের নর্দান সার্কেলের হাতে রাজধানীর গাবতলীতে যাত্রী আনলোড করার সময় তাদের ধরা হয়। হেলালের মরদেহ ১০ বোতল ও সিটের নিচে রাখা ১৮০ বোতল ফেনসিডিলে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সুপারভাইজার ৫৫ বোতল ফেনসিডিলের ব্যাগ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। হেলাল ও মৃদুলকে আটক করে ‘সরকার ট্রাভেলস’ নামের বাসটি জব্দ করা হয়। এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে বিভিন্ন পেশার আড়ালে চলে ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে তরল মাদক ফেনসিডিল দেশে প্রবেশ করছে। এসব মাদক রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে সরবরাহ করছে ব্যবসায়ী বা পরিবহনকারীরা। গ্রেফতার এড়াতে তারা মাদক বহনে নতুন কৌশল অবলম্বন করে। ইয়াবা ও গাঁজার পাশাপাশি সম্প্রতি ঢাকায় ফেনসিডিলের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে এর চালানের পরিমাণ বাড়ছে। চলমান মাদকবিরোধী ‘অভিযান’ চললেও কোনোভাবেই কমছে না মাদকের সরবরাহ।

    ডিএনসি ঢাকা উত্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, হেলাল ও মৃদুল পরিবহন শ্রমিকের ছদ্মবেশে পাবনা থেকে ফেনসিডিল নিয়ে যাচ্ছিল। হাতেনাতে তাদের আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে ঢাকায় ফেনসিডিলের ব্যবহার বেড়েছে। এ কারণে চালানও আসছে। সম্প্রতি বেশ কিছু চালান আটক করা হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকা থেকে ১৫৫ বোতল ফেনসিডিলসহ দুইজনকে আটক করে ডিএনসি। ৮ নভেম্বর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ থেকে ৬০১ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে র‌্যাব। একই সময়ে। আলমগীর ও আবদুস সালামকে আটক করা হয়। ফেনসিডিল বহনে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ভ্যান জব্দ করেছে র‌্যাব।

    মাদক ব্যবসায়ী শামসুল আলম গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে মাইক্রোবাসে করে ফেনসিডিল নিয়ে আসছিলেন। যাত্রাবাড়ীর দোনিয়া এলাকায় গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৪১৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে র‌্যাব-১০। শামসুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এসব ফেনসাইক্লিডিন রাজধানীতে সরবরাহের জন্য নিয়ে আসেন। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর শনির আখড়া এলাকা থেকে ৮ বোতল ফেনসিডিলসহ সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে র‌্যাবের আরেকটি দল। তিনি মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফেনসিডিল সরবরাহ করেন। জানা গেছে, ভারত থেকে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ফেনসিডিল দেশে প্রবেশ করে। এই ফেনসাইক্লিডিন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

    মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেমিক্যাল ল্যাবরেটরির প্রধান পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ফেনসিডিল কাশির ওষুধ। তবে এতে কোডিন নামক একটি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা একটি ওষুধ। এটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই উপাদানটি অনেক গুণ বেশি দেওয়া হয়। এই ওষুধের কারণে বেশি ঘুম হয়। মাদকাসক্তরা শীতকালে এটি বেশি খায়।

    মন্তব্য করুন