অর্থনীতি

দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে ৫০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে। আসামিদের মধ্যে ব্যবসায়ী মহলের পাশাপাশি সাবেক অনেক মন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে দেশ থেকে অন্তত দেড় লাখ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের মদদে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাট এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপ ‘এস আলম গ্রুপ’ দুর্নীতি ও পাচারকারবারীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। কোম্পানির মালিক সাইফুল আলম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরবসহ দুই দেশে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জনতা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। ইউনাইটেড গ্রুপ, বসুন্ধরা, সাদেক এগ্রো, রংধুন গ্রুপ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তার স্ত্রী আরিফা জেমিন কণিকা, সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর ও তার স্ত্রী হাসিনা গাজীসহ দুই কোম্পানি, ইউনাইটেড গ্রুপ, বসুন্ধরা, ৫০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত শুরু হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচারের সাথে। বিভাগ (সিআইডি)। আগামী সপ্তাহে, আরও ৫০ জন ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের জন্য তদন্ত করা হবে বলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, অর্থ পাচারের অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপরাধ, জালিয়াতি, জালিয়াতি ও হুন্ডি কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। এস আলম ও তার সহযোগীদের নিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এস আলম বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিজের ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ তৈরি করেছেন। সিঙ্গাপুরে এস আলমের ক্যানালি লজিস্টিকস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি রয়েছে যার পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। তারা বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির নামে এবং প্রতারণার আওতায় বিনিয়োগের নামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫.০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর বাইরে নামহীন কোম্পানি খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন এস আলম।

সিআইডি জানায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অর্থ পাচারের অপরাধ করেছেন।

জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ২০২৩ সালের আগস্টে রুল জারি করে হাইকোর্ট। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সেই রুল বাতিল করে দেয়।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেক্সিমকো গ্রুপের ১৮টি এবং এস আলম গ্রুপের অন্তত ১২টি কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫০০ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাচারকৃত অর্থের মধ্যে তারা জনতা ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে কাগজের কোম্পানি খুলে সেখানে পণ্য পাঠায়। কিন্তু সেসব পণ্য বিক্রির টাকা দেশে ফেরত আসেনি। বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারসহ সমগ্র আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালমান এফ রহমান মালিকানাধীন ব্যবসার নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে অর্ধেকের বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, সংস্থাটি নাবিল গ্রুপের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে। কোম্পানির কর্মচারীদের নামে কাগজের কোম্পানি তৈরি করে ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এস আলমের আস্থাভাজন এই দলটি বিশাল লো নিয়েছিল