দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ উৎসবমুখর পরিবেশে খুলছে।বাজল ক্লাসের ঘণ্টা
করোনা মহামারীর অনেক পরে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে বেরিয়ে আসছে। আজ, রবিবার থেকে তাদের ক্লাস শুরু হচ্ছে। ক্লাসের ঘণ্টা বাজবে। শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরাও প্রায় দেড় বছর পর স্কুলের আঙিনায় পা রাখছে। তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কৌতূহল। কেমন তাদের প্রিয় স্কুল। শ্রেণীকক্ষ কেমন? সহপাঠীরা কেমন আছে? প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যেতে আগ্রহী। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, করোনার বিভিন্ন জটিল সমীকরণ সমাপ্ত হওয়ার পর, শুরুতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণামূলক ক্লাস শুরু করা হয়েছে। শিক্ষকরা করোনায় সচেতনতামূলক বক্তৃতা দেবেন। শিক্ষার্থীরা বলবে তাদের মনোবল শক্তিশালী রাখতে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আজ সকাল ১০ টায় রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কলাবাগান লেক সার্কাস স্কুল পরিদর্শন করবেন। এদিকে, গতকাল জামালপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল (আজ) থেকে সরাসরি পাঠদান শুরু হবে।” তবে, যদি করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকে, প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাময়িকভাবে যদি বন্ধ করার প্রয়োজন হলে, তাও করা হবে।
২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দুই মাস ক্লাস নেয় কিন্তু কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। সকল শিক্ষার্থীকে বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে অটোপাস দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল একটি বিশেষ পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের জেএসসি এবং এসএসসি এবং সমমানের ফলাফল বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ বছর ক্লাস কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। কোন পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এবারের বার্ষিক ও বোর্ড পরীক্ষার জন্য আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রস্তুতি চলছে। করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষা প্রশাসন এই পরীক্ষাগুলো নেবে।
রাজধানীর বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বেগম বলেন, প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়াতে প্রেরণামূলক বক্তৃতা দেওয়া হবে। “আমরা ক্লাসের শুরুতে শিশুদের মনোবল বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলব,” তিনি শনিবার দুপুরে তার স্কুলে আমাদের বলেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। করোনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হবে। শিক্ষকরা প্রথম শ্রেণীতে আলোচনা করবেন কিভাবে তারা চলবে, কিভাবে তারা বিদ্যালয়ে চলাচল করবে।
মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রথম দিনে পাঁচটি ব্যাচ শিক্ষার্থী আসবে উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের বড় প্রতিষ্ঠান। আমরা ক্লাস ম্যানেজমেন্টে একটু বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল ক্লাস সঠিকভাবে নেয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছি। এসএসসি ২০২০ এবং ২০২১ এবং এইচএসসি ২০২০ ও ২০২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও প্রথম দিন ক্লাসে আসবে। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তরে আসবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতভাগ শিক্ষক -কর্মচারীদের টিকা দেওয়া হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর তিনি শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ক্লাসে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, ওয়াশরুম সবকিছু সাজানো হয়েছে। শিক্ষকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়াতে উৎসাহিত হবে এবং স্কুলে ঢোকার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করা হবে। প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক বিনিময় করবে। তারা তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত হবে। প্রতিদিন তারা কীভাবে স্কুলে আসবে, কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়া হবে।
এদিকে, স্কুল খোলার আনন্দে কিছু কিন্ডারগার্টেনের স্কুলের শিক্ষার্থীদের। মহামারীর কারণে তাদের স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষা প্রশাসন এই শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।