দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে হাওর
সম্প্রতি হাওরাঞ্চলের বাঁধে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এবং হাওরপাড়ের কৃষকরা ফসল রক্ষায় টানা ১৫ দিন পানি প্রবাহ বন্ধের চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কৃষকদের কপাল পুড়ে গেছে। হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জড়িত। ফলে বাঁধ সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের একাধিক মন্ত্রী হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক গত শনিবার এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে শামীম হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক। তাদের সামনে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন এলাকাবাসী। মন্ত্রীরা স্থানীয় কৃষকদের অনিয়মের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অন্যদিকে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ঘটনাস্থলে কাজ করছে। চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ধসে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে দুই হাজার হেক্টর জমির ধান। সেখানে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। রোববার সকালে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন হাওরে পানি উপচে পড়ে। পরে বিকেলে হাওরের বাঁধ ভেঙে কয়েকটি ছোট-বড় হাওরের পাকা-আধা-পাকা ধান তলিয়ে যায়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি হাওরের বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ৪২টি হাওরে এবার আবাদ হয়েছে দুই লাখ ২২ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। এসব জমির ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১০ দিন সময় বাড়ানোর পরও কাজ শেষ হয়নি। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওর বাঁধের স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও হাওর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (এইচএপি) নামের একটি সংগঠন এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে স্থানীয় রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেনামে রয়েছেন। তারা কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। সে কারণে বাঁধের কাজ সদয় হয়। সময়মতো কাজ শুরু হলেও সময়মতো শেষ হয় না।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দা সালমা জাফরিন বলেন, হাওর বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা হাওরের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন যত দ্রুত সম্ভব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।