• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত।কেএসআরএম শিপইয়ার্ড বন্ধ করে দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়

    চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড- উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের সাগরকাইলের কবির স্টিল শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি ইয়ার্ডের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা, ঘনঘন দুর্ঘটনা এবং সম্প্রতি একজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় এমনটি করা হয়েছে।

    শিপইয়ার্ড বন্ধের পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সাত কর্মদিবসের মধ্যে কবির স্টিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুর্ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দায় নির্ধারণ করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিপ রিসাইক্লিং শাখা থেকে পৃথক দুটি আদেশ জারি করেন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব সোহেলা নাসরীন।

    এদিকে, সীতাকুন্ডের মাদাম বিবিরহাট এলাকায় কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন খাজা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে (বর্তমানে কবির গ্রুপ শিপ রিসাইক্লিং স্হাপন) এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

    গত বছরের নভেম্বরে শিল্প মন্ত্রণালয় চার মাসের জন্য স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি স্থগিত করে। পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একই অভিযোগে তিন মাসের জন্য জাহাজ আমদানি স্থগিত করে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর পরও ইয়ার্ড দুটিতে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে দেশে-বিদেশে জাহাজ রিসাইক্লিং শিল্পে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে।

    জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে আরিফুল ইসলাম সুজন (২৮) নামে এক শ্রমিক মারা যান। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজে কাজ করার সময় উচ্চতা থেকে পড়ে গিয়ে আরিফের মৃত্যু হয়। মালিক প্রথম থেকেই প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন যে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত দুই মাসে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি শিপইয়ার্ডে চারটি দুর্ঘটনায় একজন শ্রমিক নিহত হয়েছে। একজন শ্রমিকের হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।

    মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশ অনুযায়ী, শিল্প মন্ত্রণালয় জাহাজ ভাঙা ও পুনর্ব্যবহার বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে নিরাপদ ও প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে জাহাজের পুনর্ব্যবহারে কাজ করছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ও শ্রমিকদের মৃত্যুর কারণে নেতিবাচক দেশে-বিদেশে এই শিল্প সম্পর্কে ধারণা তৈরি হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণে, জাহাজ ভাঙা ও জাহাজ পুনর্ব্যবহার বিধিমালা ২০১১-এর ৪৫.১ বিধি অনুসারে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইয়ার্ডের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইয়ার্ডকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

    আদেশের অনুলিপি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিচালক, চট্টগ্রাম কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সীতাকুন্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

    তদন্ত কমিটি : এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মুফিদুল আলম, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম; আবদুল্লাহ আল সাবিক, উপ-মহাপরিদর্শক, কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম।

    দুর্ঘটনার কারণ জানতে, দায় নির্ধারণ এবং দুর্ঘটনা রোধে করণীয় জানতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক নুরুজ্জামান আমাদের বলেন, গতকাল পর্যন্ত তিনি আদেশ পাননি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

    কমিটির সদস্য কলকারখানা ও সংস্থাপন পরিদর্শন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাবিক মুবাররাত বলেন, কমিটির আহ্বায়ক করণীয় ঠিক করবেন। আমরা ইয়ার্ড পরিদর্শন করলে আমরা একসাথে তদন্তে অংশ নেব।

    মন্তব্য করুন