• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    দিরাইয়ে আওয়ামী লীগে সংঘর্ষ।পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে রমাদা মজুদ ছিল

    অতিথি হিসেবে আসা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ হামলা থেকে বাঁচার জন্য মাথায় চেয়ার ধরে আছেন- এই ছবি দেখে অনেকেই লজ্জিত। উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের মানুষ চরম ক্ষুব্ধ ও বিব্রত। ঘটনার পর উভয় পক্ষই নীরব থাকলেও ভেতরে উত্তেজনার ঘূর্ণিঝড়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলের বিভাজন রেখা আগে সরিয়ে নিলে এমন ঘটনা ঘটত না। প্রশ্ন উঠেছে- পাশের ভবনের ছাদ থেকে একের পর এক রামদা কে দিয়েছে?

    জানা যায়, দিরাইয়ের বিগত পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দলীয় মনোনীত প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। ভোটে হেরে গেলে বিরোধ আরও তীব্র হয়। এখন স্থানীয় রাজনীতিতে একপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন মোশাররফ মিয়া, অপরপক্ষের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রদীপ রায় দলীয় সমর্থিত প্রার্থী খায়রুল কবির রুমেনকে সমর্থন করেন এবং মোশাররফ বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটের পক্ষে ছিলেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে জোর মহড়া হয়। পরে গত সোমবার উপজেলা সম্মেলনে উভয় পক্ষই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। মোশাররফের সমর্থকরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা সম্মেলন মঞ্চের নিয়ন্ত্রণ নেবে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

    গত রোববার সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে মাইকে বলতে শোনা যায়, ‘মি. মোশাররফ, শেখ হাসিনার পক্ষে- আপনার লোকদের থামান।’ তবে কাউকে থামতে দেখা যায়নি। সংঘর্ষের পাশ দিয়ে বিএডিসি ভবন থেকে অনেক রামদাকে নিচে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল। এসব দেশীয় অস্ত্র আগে থেকেই ছাদে মজুত ছিল। যারা ছাদে রামদা রাখবে, তাদের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থা কেন তা জানল না? স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরাও বারবার এই প্রশ্ন তুলেছেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক সমাজকর্মী জানান, অন্তত তিন হাজার মানুষের মিছিল নিয়ে মঞ্চের দিকে আসেন মোশাররফ মিয়া। তখনই মোশাররফকে আটকাতে পারতেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সে সমস্যার সমাধান করতে পারত। তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।

    দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মাথায় চেয়ার চেপে দলীয় কর্মীদের ইট দিয়ে বাধা দিচ্ছেন। এটা দিরাইয়ের মানুষের জন্য লজ্জার।’

    প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, বিষয়টি পুলিশকে আগেই জানানো হয়েছে। সম্মেলনস্থলে ১৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বলা হয়েছিল যে কেউ ঝামেলা করার চেষ্টা করবে ক্যামেরায় ধরা পড়বে। কিন্তু এটা ঘটেছে।

    আগে কেন বিরোধ মিটেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কার সঙ্গে সমঝোতা হবে? মোশাররফ আমাকে ইয়াবা কারবারী, কবিতা চোর বলে- আমি তাকে কিছু বলি না। তিনি দলের জন্য কাজ করেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতির পাঠানো প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। তারা আমার মুখ রাখেনি, আমি লজ্জিত-দুঃখিত।’

    বিএডিসি ভবনের ছাদে রামদা : সংঘর্ষ চলাকালে পার্শ্ববর্তী বিএডিসি ভবনের তিন-চারজন যুবক নিচে কয়েকজন যুবককে অসংখ্য রামদা দিচ্ছিল। এরা কারা জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, আমরা যদি এটি রাখি তবে আমরা এটি মঞ্চের পাশে রাখব, সেখানে নয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যাচ্ছে, কারা তারা?’

    দিরাই থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, এমন কোনো ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখিনি। সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

    আজমলের কাছে কনে আনা হয়নি : সম্মেলন থেকে ফেরার পথে আজমল হোসেন চৌধুরী নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মাসখানেক আগে জগন্নাথপুরের কনের সঙ্গে তার বাগদান হয়। আগামী মাসে পাত্রী তোলার কথা ছিল। প্রায় ১০ বছর ধরে দুবাইতে থাকা এই তরুণ সোমবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থলে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর তিনি দিরাই পৌর এলাকার বিদ্যুৎ অফিসের পাশে নিজ বাড়িতে ফিরে স্বজনদের জানান, তার বুকে জ্বালা করছে এবং দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

    আজমল হোসেনের আত্মীয় স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুব চৌধুরী জানান, আজমল আওয়ামী লীগের কর্মী নয়। আওয়ামী লীগের কোনো সমাবেশে তাকে দেখা যায়নি। তিনি দুবাইয়ের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জানান, তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে কোনো আঘাত নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।

    মন্তব্য করুন