দিনভর বিশৃঙ্খলা, রাতে বাড়ল বাসের ভাড়া
ডিজেল-পেট্রোলের রেকর্ড দাম বাড়ায় দিনভর যাত্রীদের দুর্ভোগ, পরিবহন সংকট বিশৃঙ্খলার পর রাতে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। রবিবার থেকে এই ভাড়া কার্যকর হবে। তেলের দাম বাড়ায় গতকাল বেশিরভাগ বাস রাস্তায় চলাচল করেনি। দূরপাল্লার বাসও কম চলেছে।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভাড়া সংশোধন সংক্রান্ত বৈঠকের পর এ ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া বেড়েছে ৩৫ পয়সা। ২ কে ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আড়াই টাকা করা হয়েছে। দূরপাল্লার ৫২ আসনের বাসের ভাড়া বেড়েছে ৪০ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। তবে দূরপাল্লার ৫২ আসনের বাস বাস্তবে উপলব্ধ না হওয়ায় ৪০ আসনের বাসের প্রকৃত ভাড়া হবে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৮৬ পয়সা।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এই পাঁচ জেলায়ও প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া বেড়েছে ৩৫ পয়সা। ২ টাকা ৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়েছে। শহরে সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ১০ টাকা। মিনিবাসে ৮ টাকা।
শুক্রবার রাতে বাসের জ্বালানি ডিজেলের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে শনিবার সকালে বিআরটিএকে চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। চিঠিতে বলা হয়, শুধু তেল নয়, গত দুই বছরে যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। ভাড়া না বাড়ালে খরচই উঠবে না। বাস চালানো সম্ভব হবে না।
মালিকপক্ষের চিঠি পেয়ে বিআরটিএ বৈঠক ডেকেছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় ভাড়া সংশোধন কমিটির সভা শুরু হয়। সাড়ে চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, নগর পরিবহনের ভাড়া ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২২ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১১৬ কিমি। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর ৪০ আসনের বাসের ভাড়া ২১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৬৬ টাকা হয়েছে। এবার তা হবে ৩৩২ টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে ডিজেলের দাম দুবার বেড়েছে এবং ভাড়া বেড়েছে জনপ্রতি ১১৭ টাকা।
মিরপুরের পল্লবী থেকে সদরঘাটের দূরত্ব ১৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার। আগে এই রুটে ভাড়া ছিল ৩৬ টাকা। আজ থেকে ৪২ টাকা দিতে হবে। যদিও অনেক পরিবহনের বাস অগ্রিম ভাড়া নিচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেওয়ার কথা জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান বাসে তালিকাটি লাগিয়ে রাখতে হবে। না হলে শাস্তি পেতে হবে।
সড়ক পরিবহন সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী এক ব্রিফিংয়ে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনো তেলের দাম কম। ধন্যবাদ পরিবহন মালিকদের। তেলের দাম বাড়ার পরও শনিবার তারা বাস চালায়। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী এর অনুমোদন দিয়েছেন।
জ্বালানি বিভাগ তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে দূরপাল্লার বাসে ২৯ পয়সা এবং নগর পরিবহনে ২৮ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। তবে ৫০ পয়সা বেশি ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন মালিকরা। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, যাত্রীদের স্বার্থে সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা মালিকরা মেনে নিয়েছেন।
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ অনেক এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তেলের দাম কমানোর দাবিতে বন্দর নগরীতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। রাজধানীতেও তেমন বাস চলাচল করেনি। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশি দামে তেল কিনে পুরনো দামে গাড়ি চালালে লোকসান হবে। আবার ভাড়া বাড়ানোর আগে যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা গাড়িও ভাঙচুর করে। ক্ষয়ক্ষতি ও ভাঙচুরের ভয়ে বাস সড়কে নামায়নি মালিকরা।
বেসরকারি বাস কম চললেও রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস চলছে পূর্ণ গতিতে। কিন্তু ভিড় ছিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বিপরীতে বাসের জন্য অপেক্ষারত নাজমা আক্তার জানান, পরপর তিনটি বিআরটিসি বাস ছেড়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে সে দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ফার্মগেটে যেতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া নেয় ১৫০ টাকা। রিকশাওয়ালা একশ টাকা চাইল। এত টাকা কোথায় পাব?
দুপুরে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষারত নাহিদুর রহমান জানান, প্রেসক্লাবের ভাড়া ১০ টাকা। তরং, রজনীগন্ধাসহ সব পরিবহনের বাস অগ্রিম ১৫-২০ টাকা নেয়। এখন ৩০ টাকা দাবি করছে। এটা ডাকাতি.
জিগাতলায় দেখা যায়, অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।