• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    দাহ্য পদার্থ বহনকারী যানবাহন এবং দুই চাকার যান চলাচল করবে না।বঙ্গবন্ধু টানেলে নিরাপত্তা

    বঙ্গবন্ধু টানেলের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পর দেশের প্রথম টানেলের ‘স্বপ্নের দরজা’ খুলে দেওয়া হবে। তবে এই টানেল দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েক ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার কারণে সুড়ঙ্গ দিয়ে কোনো দাহ্য পদার্থ পরিবহন করা যাবে না। আবার দুর্ঘটনা এড়াতে দুই চাকার মোটরসাইকেল ও সাধারণ সাইকেল চলাচল করতে দেওয়া হবে না। তিন চাকার অটোরিকশার কথাও ভাবা হচ্ছে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যানবাহনের গতিও। এছাড়া পায়ে হেঁটে টানেল পার হওয়ার সুযোগ নেই।

    ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে কতটি গাড়ি সুড়ঙ্গ দিয়ে যাতায়াত করবে তার একটি হিসাব প্রদান করে। টানেল অপারেশনের বছরে ৬৩ লাখ যান চলাচল করতে পারে বলে জানা গেছে। এ হিসাবে দিনে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলতে পারে। তবে বলা হচ্ছে, টানেলের মধ্য দিয়ে কত যানবাহন যাবে তা নির্ভর করছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর। এছাড়া টানেলে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি-কমানোর বিষয়টিও নির্ভর করছে মিরসরাই-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর। টানেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে টোলের হারও একটি ফ্যাক্টর খেলবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৩ সালের জরিপের পর অনেক নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনেক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই যানবাহনে চাপ বাড়ার কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

    টানেলে নিরবচ্ছিন্ন যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে পুলিশের একটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি টানেলের উভয় প্রান্তে যানজট নিরসনের জন্য ২৮টি সুপারিশ করেছে। পতেঙ্গা এলাকায় সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। ১৪টি সুপারিশ বাস্তবায়নে সিডিএ সরকারের কাছে ৫২৪ কোটি টাকা চেয়েছে।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানেল দিয়ে যানবাহন চালিয়ে চালকরা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা পাবেন। এতে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলের নিরাপত্তার পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। সাড়ে তিন কিলোমিটার টানেলে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি হবে ৮০ কিলোমিটার। এই গতিতে চট্টগ্রাম শহরের প্রান্তের পতেঙ্গা নৌ থেকে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্ত পর্যন্ত ৫-৬ মিনিটে নদী পার হওয়া যায়।

    বর্তমানে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ও কালুরঘাট সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অভিমুখে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করছে। বঙ্গবন্ধু টানেলটি চালু হলে কর্ণফুলী সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের একটি অংশ প্রাথমিকভাবে টানেল দিয়ে যাতায়াত করবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প যানবাহন। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অভিমুখে আসা যানবাহনগুলোও কম সময়ে টানেল দিয়ে যেতে পারবে। টানেলে গাড়ির টোল কত হবে তা ঠিক করা হয়নি। বলা হচ্ছে, টানেলের টোলের পরিমাণ বর্তমান শাহ আমানত সেতুর টোল হারের আড়াই গুণ হতে পারে।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যানবাহন চলাচল করবে এমন দুটি টিউবের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তা ‘ইলেকট্রো মেকানিক্যাল’ কাজ করা হচ্ছে। ২৫ জন প্রকৌশলীসহ ১৫০০ দেশি-বিদেশি শ্রমিক এসব কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। বিশেষ করে এখন টানেলের অগ্নি নিরাপত্তা, আলো, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সমন্বিত ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজ দিনরাত চলছে। এছাড়া টানেল টিউবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সহজে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাওয়ার জন্য তিনটি ক্রস প্যাসেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি সম্পন্ন হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে সাধারণত যানবাহন চলাচল করবে না। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এটি এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। এসব কাজের পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গাছ লাগানোর পাশাপাশি সংযোগ সড়কের ঢালে ঘাস লাগানো হচ্ছে।

    বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘সাধারণত যেকোনো বড় যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের সময় এ অঞ্চলের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে তা করা হয়নি। তাই এখন এসব নিয়ে ভাবতে হবে।’

    মন্তব্য করুন