দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের সামনে নিউজিল্যান্ড
রাচীন রবীন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি আর রেকর্ড জুটিতে রেকর্ড সংগ্রহ পেল নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা বিপর্যয়ে পড়লে বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে রক্ষা করার চেষ্টা করেন ডেভিড মিলার। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে, ৫০ রানের বড় ব্যবধানেই হেরে যায় প্রোটিয়ারা।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দ. আফ্রিকাকে বিদায় করে দেড় দশক পর আসরটির ফাইনালে উঠল কিউইরা। আগামী রবিবার দুবাইয়ে শিরোপা লড়াইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে দলটি।
বুধবার লাহোরে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৫০ ওভারে নিউজিল্যান্ড করে টুর্নামেন্টটির রেকর্ড ৩৬২ রান। জবাবে ২৬ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২ উইকেটে ১৫৭। সেখান থেকে পথ হারিয়ে স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ২১৮। মিলারের ৬৭ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসে ৩১২ পর্যন্ত যেতে পারে প্রোটিয়ারা।
রাচীন রবীন্দ্র নিউজিল্যান্ডের জয়ের নায়ক। ১৩ চার ও এক ছক্কায় ১০১ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ব্যাটার। পরে হাত ঘুরিয়ে এইডেন মার্করামের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন তিনি। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই। ৩২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পাঁচ সেঞ্চুরির সবকটি আইসিসি টুর্নামেন্টে করলেন ২৫ বছর বয়সী এই তারকা। ২০২৩ বিশ্বকাপে তিন সেঞ্চুরির পর এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে করলেন দুটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ সেঞ্চুরির সবগুলো আইসিসি টুর্নামেন্টে করা একমাত্র ক্রিকেটার তিনিই। তার এই পাঁচ সেঞ্চুরি এলো স্রেফ ১৩ ইনিংসে, যা দ্রুততম।
অন্যদিকে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৯৪ বলে ১০২ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটার উইলিয়ামসন। এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। এই দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১৬৪ রান, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যেকোনো উইকেটে নিউজিল্যান্ডের যা সর্বোচ্চ।
নিউজিল্যান্ড আজ ভেঙেছে চলতি আসরেই গড়া অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড। এই লাহোরেই গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ডের করা ৩৫১ রানের রেকর্ড রান টপকে ৩৫৬ রান তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশ ও অজিরা ভেঙে দেয় নিউজিল্যান্ডের গড়া ২০০৪ সালের রেকর্ড। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩৪৭ রান করেছিল কিউইরা।
আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টের নকআউটে আজ নিউজিল্যান্ডের করা ৩৬২ তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৭ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ গড়েছিল স্বাগতিক ভারত। আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টের নকআউটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডও অবশ্য কিউইদের। ওয়েলিংটনে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৯৩ রান করেছিল স্বাগতিকরা।
লাহোরের পাটা উইকেটে এদিন টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় নিউজিল্যান্ড। ইনিংস উদ্বোধনে উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে মাঠে নামেন রাচীন রবীন্দ্র। দলীয় পঞ্চাশের আগে ইয়ংকে হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে দেড় শতাধিক রানের জুটি গড়েন রাচীন ও উইলিয়ামসন। মাত্র ৩২ ওভারের মধ্যেই দুই শ রান পূর্ণ করে নিউজিল্যান্ড। শেষ ১৮ ওভারে করে আরও ১৬২ রান।
এদিন ৪৭ বলে ফিফটি হাঁকানো রাচিন সেঞ্চুরি করতে ব্যয় করেন ৯৩ বল। শেষ পর্যন্ত ১০১ বলে ১০৮ রানে থামেন তিনি। ১৩টি চারের পাশাপাশি হাঁকান ১টি ছক্কা। অন্যদিকে, হাফ সেঞ্চুরি করতে ৬১ বল ব্যয় করা উইলিয়ামসন পরের পঞ্চাশ করেন স্রেফ ৩০ বলে। শেষ পর্যন্ত ৯৪ বলে ১০টি চার ও ২ ছক্কায় ১০২ রান করে আউট হন তিনি।
পাঁচ নম্বরে নেমে রান পাননি টম ল্যাথাম। তবে কিউইদের বড় রানের দিকে নিয়ে যান মিচেল ও ফিলিপস। ৩৭ বলে ফিফটি থেকে এক রান দূরে থাকতে আউট হওয়া মিচেল ৪টি চারের পাশাপাশি হাঁকান ১টি ছক্কা। সমান রান করা ফিলিপস খরচ করেন মাত্র ২৭ বল। ১২ বলে ১৬ রান করে আউট হন মাইকেল ব্রেসওয়েল। তাতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬২ রানে থামে কিউইরা।
প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান লুঙ্গি এনগিদি। দুটি উইকেট দখল করেন কাগিসো রাবাদা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে টেম্বা বাভুমা ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেনের ফিফটিতে ভালো এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই দুজনকেই বিদায় করে কিউইদের ম্যাচে ফেরান অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। দলনেতা বাভুমা ৭১ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৬ রান করেন। আর ডুসেন ৬৬ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন।
এরপর মূলত ধস নামে প্রোটিয়া শিবিরে। ডেভিড মিলার ছাড়া সবাই আসা যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত থাকেন। এই বাঁহাতি শেষ অবধি ঝড়ো সেঞ্চুরি করেই অপরাজিত থাকেন। তিনি ৬৭ বলে ১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০০ রান করেন। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতায় দল হেরে বসে বড় ব্যবধানে।
কিউই বোলারদের মধ্যে স্যান্টনার ৩টি উইকেট পান। দুটি করে উইকেট শিকার করেন ম্যাট হেনরি ও গ্লেন ফিলিপস।
Do Follow: greenbanglaonline24