জাতীয়

ত্রিমুখী সংকটে লাখো হাওরের কৃষক

সুনামগঞ্জের ৪২টি হাওরের ১৬৮টি পয়েন্টে বাঁধ রক্ষায় কৃষক, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা লড়াই করছেন। হাওরে বুধবার পর্যন্ত সাত শতাংশ ধান কাটা হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। মাঠে চার শতাংশ ধান পেকে গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী তিনদিন ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ অবস্থায় কৃষক সংকটে পড়েছেন। কোথাও তারা ত্রিমুখী সংকটে রয়েছে। একদিকে হাওরে পানি থাকায় বাঁধ রক্ষা, ফসল কাটা ও হারভেস্টার মেশিন ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বুধবার পর্যন্ত জেলার ১২টি উপজেলায় ৭ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন নতুন ধান কাটা হচ্ছে বলে আগামী সপ্তাহে ধান কাটা শুরু হবে।

এদিকে ছয় মাসের কঠোর পরিশ্রমে জেলার অনেক স্থানেই বাঁধ বিপর্যয় ঘটেছে। ২ এপ্রিল থেকে জেলার ১৪০০ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বাঁধের উজান থেকে আসা ঢালের ১৬৮টি পয়েন্টের কয়েকটিতে ধস নেমেছে এবং কিছু অংশ স্পর্শ করে পানি প্রবেশ করছে বাঁধে। এপ্রিল থেকে ঊর্ধ্বগামী ও সুনামগঞ্জে তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর পানি কমে গেলেও বাঁধ ঠেকাতে লড়াই করতে হচ্ছে।

তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের সন্তোষপুরের রতন সরকার গত মঙ্গলবার বিকেলে বাঁধ ধস রোধে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, গুরমার হাওরের সম্প্রসারণে ১৫ কেয়ার (৫ একর) জমি করেছি। তিন-চার দিন পর ধান পাকতে শুরু করবে, তখন বাঁধের কাজ করার সুযোগ থাকবে না। ধান কাটবো না, বাঁধ দেবো- বুঝলাম না। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রনি সরকার বলেন, যাদের পরিবারে বেশি লোক আছে তারা ধান কেটে বাঁধ রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু যাদের লোক কম তারা সেটা করতে পারবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, চার দিন পর কোনও কৃষককে বাঁধের কাজে যেতে বলা হবে না। বৃষ্টি হলে বা জমিতে পানি পড়লে হার্ভেস্টার মেশিন দিয়েও ধান কাটতে পারবেন না, সনাতন পদ্ধতিতে ধান কেটে ঘরে নিয়ে যেতে হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, হাওর রক্ষা বাঁধের ১৬৮টি পয়েন্টে পানি ঢুকছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে দুইটি, ধর্মপাশায় ১৪টি, বিশ্বম্ভরপুরে চারটি, তাহিরপুরে ২৬টি, জামালগঞ্জে সাতটি, শান্তিগঞ্জে ৩৩টি, দিরাইয়ে ২৯টি, শাল্লায় ২৯টি, জগন্নাথপুরে ১০টি, দোয়ারায় নয়টি ও পাঁচটি পয়েন্টে পানি পড়ে গেছে। ছাদ. সকলের প্রচেষ্টায় এগুলো বন্ধ করা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে তাহিরপুর-ধর্মপাশার গুরপুর এক্সটেনশন। পানির উচ্চতা বাড়লে আরও অনেক বাঁধের অবস্থা খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

সুনামগঞ্জে ১৫০টি হাওরের মধ্যে ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষায় ১২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭২৬টি পিআইসির মাধ্যমে ৫৩৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিলের মধ্যে দুটি বড় হাওর নদীর উপরের অংশে তলিয়ে যায়। ছোট-বড় আরও ১৩টি হাওর তলিয়ে যাওয়ায় পাঁচ হাজার হেক্টর সরকারি ফসল নষ্ট হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে সেই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকার চাল ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।

মন্তব্য করুন