• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    তিন বছরে ১৩৭ জন নিহত।হানিফ ফ্লাইওভারকে দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’ মনে হচ্ছে

    ৮ জানুয়ারি রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজার সামনে মেঘলা পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় দুই পথচারী নিহত হন। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বাসের চালক রাকিব শরীফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় যে, সে আরো ট্রিপ পাওয়ার জন্য বেপরোয়াভাবে বাসটি চালাচ্ছিল। ওই দিনের ঘটনা ছাড়াও দেশের বড় এই ফ্লাইওভারে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। হতাহতের পর এসব দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও ছোটখাটো দুর্ঘটনার তথ্য আড়ালেই।

    ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহন চালক, ফ্লাইওভারের নিরাপত্তারক্ষী ও নিয়মিত যাত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূলত বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিংয়ের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া শহরতলিতে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসে ব্রেক সমস্যাসহ ফিটনেসের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। লেনের টানাপোড়েনের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা। ফ্লাইওভারের ‘সম্প্রসারণ জয়েন্টে’ অতিরিক্ত ফাঁকের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা। ফ্লাইওভারে পথচারীদের হাঁটতে না দিলেও তাদের অবাধ চলাচলকে দায়ী করা হচ্ছে দুর্ঘটনার জন্য।

    গত এক মাসে এ ফ্লাইওভারে অন্তত তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৮ জানুয়ারি মেঘলা পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দুই পথচারী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। ওই দিন গুলিস্তান সেকশনে নামার সময় বাসটি পথচারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর ফ্লাইওভারে ওঠার সময় শ্রাবণ পরিবহনের ধাক্কায় আহত হন এক পুলিশ কনস্টেবল। চলন্ত বাসের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় আমেরিকা প্রবাসীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। ২৬শে জানুয়ারি, রাজধানীর ওয়ারীতে একটি সুপার মার্কেটের সঙ্গে মেঘালয় বিলাসবহুল পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুটি অটোরিকশার অন্তত পাঁচ যাত্রী আহত হন। তবে এ সময়ে রাজধানীর অন্য ফ্লাইওভারগুলোতে তেমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

    হানিফ ফ্লাইওভারের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট ইনচার্জ মো. আরেফিন আকন্দ বলেন, ফ্লাইওভারে বারবার গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে ফ্লাইওভারে ওঠার পর যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। চালকরা যেকোনো উপায়ে অবাধ্য হচ্ছেন। সে তার খুশি মতো ওভারটেক করে, এবং খালি হওয়ার সাথে সাথে সে বেপরোয়াভাবে চালাতে শুরু করে। উপরের সড়কে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা নেই। এ জন্য তারা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দুর্ঘটনার পরই তারা ফ্লাইওভারের ওপরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চালকরা সবচেয়ে বেপরোয়া। তারা বারবার লেন পরিবর্তন করে। এতে দ্রুতগতির বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এছাড়া ফ্লাইওভারের কিছু অংশে এক্সপেনশন জয়েন্টের ফাঁকে দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের চাকা পড়ে গেলে তা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তার পরেও দুর্ঘটনা ঘটে।

    গত শুক্রবার সায়েদাবাদ থেকে গুলিস্তান হয়ে টিকাটুলি যাওয়ার ফ্লাইওভারে অনেক বাসকে যাত্রী তুলতে ও নামাতে ফ্লাইওভারে থামতে দেখা যায়। গুলিস্তান টোল প্লাজার আগে ফ্লাইওভারের একাংশ চলে গেছে পলাশীর দিকে। মৌমিতা পরিবহনের বিভিন্ন বাস ও ওই রুটে চলাচলকারী ঠিকানা থেকে যাত্রীদের ফ্লাইওভারে নামতে দেখা যায়। পরে তাদের গুলিস্তান হয়ে অন্তত এক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে।

    মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক মো. শুক্রবার বিকেলে শাহীন বলেন, তারা সব সময় গাড়ি ও যাত্রী নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তাদের নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করে। এর পরও দেখা যায় অনেক পরিবহনের বাস বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

    মন্তব্য করুন