বিবিধ

তারা সবাই এতিম, একসাথে বিয়ে হচ্ছে

সানজিদা আক্তার উপকূলীয় ভোলার ভেলুমিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে অভাবী পরিবারে বেড়ে ওঠা। জন্মের কয়েক বছর পর বাবাকে হারান তিনি। তারপর আমার মায়ের সাথে অনাহারে জীবন কেটে যায়। যতই দিন যাচ্ছে সানজিদের বিয়ে নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সংসার করার। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। শৈশব-কৈশোরের আঙিনা ছেড়ে নতুন জীবন শুরু করেছেন সানজিদা।

শুধু সানজিদা নয় ৩৪ জন এতিম তাদের স্বপ্নের আঙিনায় রঙিন ক্যাম্পাসে পা রেখেছে। তাদের জন্য জীবন নতুন মোড় নিয়েছে। সানজিদার বিয়ে উপলক্ষে শনিবার বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে কমিউনিটি সেন্টার সেজেছে বর্ণিল সাজে। ঢাকায় ভোলা সমিতি এতিম মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করেছে।

কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। আবার কারো বাবা-মা দুজনই নেই। তবে তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে এই সমাজে তারা মেয়েকে বিয়ে দিতে পারে না। বিয়ে দেওয়াটা স্বপ্নের মতো। ভোলা সমিতি এমন মেয়েদের জন্য নাকের ফুল, গয়না, শাড়ি, জুতা, হাতের ব্যাগ থেকে শুরু করে সবই কিনেছে। বরের জন্য শেরওয়ানি, পায়জামাসহ সবকিছুই কেনা হয়েছে। সে একটি ঐশ্বরিক কাজ। মঞ্চ সাজানো হয়েছে ফুল, লাল-হলুদ কাপড়ে। বিয়ে উপলক্ষে সকাল থেকে ভোলা সমিতির সদস্যদের দম ধরার সময় নেই। দুপুর আড়াইটার দিকে ৩৪ জন বর-কনে ঘোড়ায় চড়ে ক্লারিনেট বাজিয়ে আসেন। বর-কনে আসার সাথে সাথে ফুল ছিটানো সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

অনুরূপ পোশাক. তখন বিয়ে বাড়িতে ছবি তোলা,  খাওয়া-দাওয়ার কমতি ছিল না। অনেকে বর-কনের জন্য উপহার ঢালের ব্যবস্থা করেছেন। অতিথি এসেছেন, ৫ শতাধিক। পান্থপথের একটি এতিমখানার শিশুদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, রোস্ট, রেজালা, সবজি, বোরহানি, জর্দা। খাবার টেবিলে নিজেদের তদারকি করছিলেন ভোলা সমিতির কর্মকর্তারা।

এরপর বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার ভোলা সমিতির নেতারা মেয়েদেরকে স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেন। শেষ বিকেলে বর-কনের চোখে নতুন জীবনের স্বপ্ন। একই সময়ে, কনের চোখ মেলে যখন তিনি পরিবার ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। ভেজা চোখে আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি, দোয়া চেয়েছেন। এ সময় ৩৪ জন বর-কনের সোনালী ভবিষ্যৎ কামনায় সকলের প্রার্থনা ছিল।

ঢাকা ভোলা সমিতির সভাপতি মো. মাকসুদ হেলালী বলেন, ২০১৯ সালেও তারা যৌতুক ছাড়াই একসঙ্গে ২৪টি ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তাদের বিয়ের পর চাকরির জন্য আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়। সংগঠনের কল্যাণ তহবিল এবং বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের অনুদানে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই অর্থ ব্যয় করাকে এই মেয়েদের জন্য ভাল জিনিস হিসাবে দেখেন। বিয়ের পরও এসব মেয়েদের যোগাযোগ রাখা হয়।

ভোলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল হক মুকুল বলেন, আমরা তাদের নিজেদের সন্তানের মতো বিয়ে দিয়েছি। আমরা যাদের বিয়ে দিয়েছি তারা আমাদের ছেলে মেয়ে। তাই কেনাকাটাসহ সবকিছুই নিখুঁত হতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, গ্রামে অভিভাবকদের কষ্টের শেষ নেই। এতিম হলে বিয়ে সম্ভব নয়। যৌতুকের কারণেও অনেকের বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এমন মেয়েদের বিয়েতে সবারই সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।

মন্তব্য করুন