বিবিধ

তদন্তেই সীমাবদ্ধ নৌ দুর্ঘটনা ।কমিটির সুপারিশ তদন্তে বাস্তবায়ন করা হয় না

দেশের বেশিরভাগ নৌ দুর্ঘটনা তদন্ত এবং রিপোর্ট জমা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই প্রতিবেদন অনুসারে, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । কখনও কখনও বিভাগীয় মামলা বা স্থগিতাদেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তি দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো হয় । ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্ত প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করা হয় তাও কার্যকর হয় না ।

আবার নৌ আদালত সমুদ্র দুর্ঘটনা সম্পর্কিত মামলায় অভিযুক্ত প্রভাবশালী নৌযান মালিকদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন মামলায় আসামিদের উপস্হিত না হওয়া এবং তাদের গ্রেপ্তারের সাথে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির উদাসীনতাও এর জন্য দায়ী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলির প্রতিবেদন এবং তাদের জমা দেওয়ার পরবর্তী স্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পার পেয়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

গত ৩ মে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁথালবাড়ী ঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে নোঙর করা বাল্কহেডের সাথে সংঘর্ষে একটি স্পিডবোট ডুবেছিল এবং ২৬ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। ৩০ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা ছাড়াও মাদারীপুর জেলা প্রশাসন ৪ মে স্পিডবোটের চালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, এর আগে ৫ ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের কৈলাঘাট এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ ‘এসকেএল -৩’ এর বেপরোয়া সংঘর্ষের কারণে ‘এমএল সাবিত আল হাসান’ ডুবে গেছে। এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম বা প্রতিবেদন প্রকাশের কাজটিও ধীর গতিতে রয়েছে।

গত বছরের ২৯ জুন রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমএল মর্নিং বার্ড’ ডুবে গেলে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার দিন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ৭ জুলাই নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে ২০ দফা সুপারিশ করে। এর মধ্যে সদরঘাটের আশেপাশের অলস বার্দিং, শিপইয়ার্ডস, ডকইয়ার্ড এবং ফেরি স্থানান্তর করা; নৌ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য দায়ী মাস্টার ইঞ্জিন চালকদের তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার সহ নৌ-পুলিশের জনবল বাড়ানো; আইনটি সংশোধন করার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নৌ আইন লঙ্ঘনকারীদের দণ্ডের পরিমাণ এবং জরিমানার পরিমাণ যুগোপযোগী করে আইনকর্মীদের ফলপ্রসূ করা সহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে আইনী তদন্তের স্বার্থে দুর্ঘটনার কারণ প্রকাশ করা হয়নি। এই সুপারিশগুলির বেশিরভাগই এক বছরে কার্যকর করা হয়নি।

এ প্রতিবেদনে অতিরিক্ত যাত্রী ও বৈরী আবহাওয়ার দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হলেও বিআইডব্লিউটিএর মাওয়া নদীবন্দর পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) শফিকুল হক এবং যুগ্ম পরিচালক (নৌ-নিত্রা) রফিকুল ইসলামকে বিভিন্ন কারণে দায়ী করা হয়েছে। তৎকালীন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট বিভাগের (বর্তমানে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর) প্রধান প্রকৌশলী একেএম ফখরুল ইসলাম এবং বিভাগের শিপ সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমানকেও ত্রুটিযুক্ত নকশার ভিত্তিতে লঞ্চটি নিবন্ধকরণ ও নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য দোষী করা হয়েছিল।
এর মধ্যে জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে দুর্ঘটনার পরপরই স্থগিত করা হয়েছে এবং মির্জা সাইফুর রহমানকে পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য লঞ্চটির মালিক আবু বকর সিদ্দিক কালু এবং তার ছেলে ওমর ফারুক লিমনকে আটক করা হয়। পরে তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাওরাকান্দি ঘাটের ইজারাদার লঞ্চ মাস্টার মনিরুল মনি ও আবদুল হাই সিকদারকে দোষ দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন