ঢাবিতে একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ।তিনবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে
সাত বছরেও শেষ হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নতুন একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজের অগ্রগতি ৬৫-৭০ শতাংশ। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৪০৯ কোটি টাকা (প্রকল্পের ৬৭ শতাংশ)।
এখন পর্যন্ত তিনটি ভবনের ফার্নিচারের টেন্ডার হয়নি। কোনো ভবনে বৈদ্যুতিক কাজের টেন্ডার হয়নি। এ ছাড়া এলসি জটিলতায় ভবনগুলোতে লিফট আমদানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, করোনা সংকট ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্মাণসামগ্রীর দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও প্রকল্প ব্যয় বাড়েনি। ফলে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে ঠিকাদাররা। বিভিন্ন ভবনে নকশা পরিবর্তন করে কাজ বেড়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক অ্যান্ড আবাসিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন ভবন সম্প্রসারণসহ ২৭টি অবকাঠামোগত কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চার বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তবে করোনা মহামারির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৬১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা সংশোধিত ব্যয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ অনুমোদন করেছে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। পুরনো ভবনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণাধীন নতুন ভবন নিয়ে উদ্বেগ।
জানা গেছে, প্রকল্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের জন্য ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) নামে দুটি কমিটি গঠন করেছে। প্রতি তিন মাস পরপর কমিটিগুলোর বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত এক বছরে পিএসসির কোনো বৈঠক হয়নি। একবার পিআইসি সভা অনুষ্ঠিত হলেও মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় বৈঠকটি নিষ্পত্তি হয়নি।
এ ছাড়া প্রকল্পের মূল ভূমিকায় কোনো প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নেই। টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং প্রকল্পের তত্ত্বাবধান এবং অগ্রগতি সমস্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী দ্বারা সম্পন্ন হয়। ফলে পিডি দায়িত্ব নিতে চায় না।
নির্মাণাধীন এসব ভবনের মধ্যে রয়েছে- আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ২১ তলা একাডেমিক ভবন, জগন্নাথ হলের ১৫ তলা বেসে ১০ তলা রবীন্দ্র ভবন এবং ১১ তলা আবাসিক শিক্ষক ভবন, ১১ তলা ভবন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১১ তলা বেইজ। আবাসিক শিক্ষক ভবন এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য 20 তলা শেখ কামাল টাওয়ার।
এগুলো চালু হলে, ফ্যাকাল্টি বিভাগগুলি অর্থ ভবনে আধুনিক ল্যাব সুবিধা সহ প্রশস্ত শ্রেণীকক্ষ পাবে। এ ছাড়া রবীন্দ্র ভবন ও বঙ্গবন্ধু হল ভবনে আলাদাভাবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত টালির কক্ষে দুই হাজার শিক্ষার্থীকে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এতে আসন সংকট কমবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অর্থ ভবন ও শেখ কামাল টাওয়ার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ। এগুলোর সিভিল অংশের যথাক্রমে ৭৮ শতাংশ ও ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমটির ঠিকাদার তমা কনস্ট্রাকশন এবং দ্বিতীয়টি যৌথভাবে মেসার্স টিসিএল এবং মল্লিক এন্টারপ্রাইজের দ্বারা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো আলোচনা ছাড়াই দুই মাসের বেশি সময় ধরে অর্থ ভবনের কাজ বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আমির হোসেন বলেন, আমি শুধু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের কাজ করি। ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস এবং অ্যাকাউন্ট ডিরেক্টরের অফিস বাকি কাজ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকৌশলী বলেন, লিফটের এখনো টেন্ডার হয়নি, বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আনতে তিন থেকে চার মাস লাগে। ফলে ভবনটি চালু হলেও সময়মতো লিফট খোলা সম্ভব হবে না।
কাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে অর্থ ভবনের তমা পাশের প্রকৌশলী মো. সুমন জানান, শ্রমিকরা বাড়ি চলে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দেরিতে কাজের আদেশ। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন তারা।
বঙ্গবন্ধু হল ভবনের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মঈন উদ্দিন ও ঠিকাদার ওয়াহিদ কনস্ট্রাক্টের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।