• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ঢাকার রাস্তায় ‘সিটি টোল’।এখনও বহাল সেই লাঠিয়াল

    ‘আমি বগুড়া থেকে তেজগাঁও চাল নিয়ে যাচ্ছি এবং গাড়িতে করে মালামাল নিতে কাঁচপুর যাচ্ছি। হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামার সাথে সাথে তিনজন ট্রাক লাঠি নিয়ে । তারা সিটি টোলের নামে ১৩০ টাকা দাবি করে। আমি বললাম, আজ রাতে খাওয়ার টাকাও কম এত টাকা দিতে পারব না। এ কথা শুনে তারা বলেন, টাকা না পেলে গাড়ি ছাড়বেন না। পরে ৫০ টাকা দিলাম। টাকার রশিদ দেননি। তিনি বলেন, ৫০ টাকায় রশিদ দেওয়া যাবে না। সম্প্রতি এক রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনিরখড়ায় দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছিলেন ট্রাকচালক আসাদুল ইসলাম।

    ওই রাতে হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামার পর ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-৩২৯০) মেসার্সের সামনের সড়কে। কাজলায় ফাতেমা নাজের পেট্রোল পাম্প সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি করে। শুধু এখানেই নয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন বিভিন্ন সড়কে এখনো সোচ্চার রয়েছে ব্যাটালিয়ন বাহিনী। সিটি টোলের নামে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে তাদের অবৈধ চাঁদাবাজি চলছে। অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব।

    যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, কাজলা, রায়েরবাগ, জুরাইন, গুলিস্তান, টিকাটুলিসহ ডিএসসিসির আওতাভুক্ত এলাকা। ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস আরো বলেন, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সিটি টোলের আওতায় নেই উল্লেখ করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘টোলের নামে এসব যানবাহন থেকে কেউ টাকা নেওয়া বেআইনি। এ ছাড়া চলন্ত কোনো যানবাহন থামিয়ে টোল আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে চাঁদাবাজি আবারও শুরু হয়েছে। আগের মতোই চালক-হেলপার ও যানবাহনে হামলার ঘটনাও ঘটছে।

    সিটি টোলের নামে দাবিকৃত টোল না দেওয়ায় ১১ জানুয়ারি ট্রাকের চালককে মারধর করা হয় এবং স্টিয়ারিং চেপে ধরে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করা হয়। চালক দুলালের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ট্রাকটি সামনে থাকা আরেকটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চালক আহত হয়।

    বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের নেতারা পণ্যবাহী যানবাহন থেকে নগরীর টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কাছে ছুটে আসছেন কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছেন না। সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। রাস্তায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি। এরপরও চাঁদাবাজি থামছে না।

    ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ইজারার নির্দিষ্ট শর্তের বাইরে কোনো কাজ করা হলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    সম্প্রতি টিকাটুলীর হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, গুলিস্তান কাপ্তার বাজার, গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, কাজলা ফাতেমা পাম্পের সামনের সড়ক ও শনির আখড়াসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতোই চাঁদাবাজি চলছে। তবে কাপ্তানবাজারে সিটি টোলের পাশাপাশি পঙ্গু ও বেকার শ্রমিকদের কল্যাণের নামে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান থেকেও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত কাপ্তান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভার থেকে নামার পর টোল রোড থেকে বের হলেই যানবাহনগুলোকে অবৈধ সিটি টোলের মুখে পড়তে হয়। তিনজনকে এই টাকা তুলতে দেখা যায়। সিটি টোল হিসেবে প্রতিটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে ৫০ থেকে দেড়শ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খোঁড়া ও বেকার শ্রমিকদের কল্যাণের নামে ‘ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাঙ্কলারী কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর রশিদ দিয়ে ৫০ টাকা করে নিচ্ছে।

    বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ফুলবাড়িয়া মোড়ে সাতজনকে রাস্তার ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের তিনজনের হাতে লাঠি। বাকি চারজনের হাতে লেজার লাইট। তারা লেজার লি দিয়ে ট্রাক থামিয়ে সিটি টোলের নামে টাকা আদায় করছিল।

    মন্তব্য করুন