• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ঢাকায় সংঘর্ষ নিয়ে পুলিশ-বিএনপি একে অপরকে দায়ী করছে

    সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিআরটিসির একটি বাস ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির দাবি, তাদের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন শতাধিক। পুলিশ জানায়, বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় আট-নয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি নেতারা একে অপরকে দায়ী করছেন।

    মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি সিটি কলেজ এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অধস্তন আদালত ও সরকারের অবমাননা, অনুপস্থিত মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, সরকারের স্বৈরাচারী দুর্নীতি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ কর্মসূচি। ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। সাতমসজিদ রোড, রাইফেল স্কয়ার, ঢাকা সিটি কলেজ, সায়েন্স ল্যাব, বাটা সিগন্যাল ও কাঁটাবন মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিছিলটি সিটি কলেজের সামনে এসে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রাবি নেতাকর্মীদের সরানোর চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ বাধা দেওয়ায় নেতাকর্মীরা বের হতে পারেনি।

    মিছিলের মাঝখান থেকে নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা ব্যানার লাগানো বাঁশ ভেঙ্গে পুলিশকে মারতে থাকে। পুলিশ তাদের সরানোর চেষ্টা করে। পরে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং ঘটনাস্থল থেকে শেখ রবিউল ইসলাম রবি, ধানমন্ডি থানার সাবেক সদস্য সচিব সৈকতকে আটক করে। কিছুক্ষণ পর নেতাকর্মীরা আবার জড়ো হয়ে প্রথমে ভাঙচুর ও পরে ফখরুদ্দিন কনভেনশন সেন্টারের সামনে দাঁড়ানো যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা এবং গাড়ির আরোহীরা তা নিভানোর পরপরই গাড়ির একটি সিটে আগুন ধরে যায়। এছাড়া বিক্ষুব্ধ জনতা ল্যাবএইড হাসপাতাল মোড়ে পুলিশের বাস ভাঙচুর করে।

    এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন দৌড়াতে লাগলো। এ ঘটনার আগে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি নেতারা একে অপরকে দায়ী করছেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয় বলে অভিযোগ বিএনপির। আর পুলিশ বলছে, বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে।

    রমনা জোনের ডিসি মো. আশরাফ হোসেন জানান, বিএনপির একদল নেতাকর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে তাদের অ্যাকশনে যেতে হয়। তাদের হামলায় আট-নয়জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

    ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান, সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে আশপাশের এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের নামে পুলিশের কাজে বাধা, গাড়ি পোড়ানো ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওসি জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের শেল নিক্ষেপ করে।

    মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, তাদের পদযাত্রা শান্তিপূর্ণ ছিল। ল্যাবএইডের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শেষ করে নেতাকর্মীদের নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে বলুন। তারাও এসেছিল। এর পরেই এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ নেতাকর্মীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার সুযোগ না দিয়ে হামলা চালায়। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, অনেকে আহত হয়। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে দোষারোপ করার জন্য।

    মেট্রোপলিস নর্থ ওয়াক

    গাবতলী বাগবাড়ী থেকে কারিগরি ও কল্যাণপুর থেকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে থেকে ৩০০ ফুট সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর উত্তর বিএনপি। সংগঠনের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের শ্রমিক-শ্রমিক ও মধ্যবিত্তের হালাল আয়ের আর কোনো পথ নেই। প্রতিদিন প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়লেও বেতন-আয় বাড়ছে না। এখন তারা আর হাঁটতে পারছে না, কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু সেই যন্ত্রণার কথা বললে বাধা দেওয়া হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।