ঢাকায় আসছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান।চার সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দীন ওয়াদ্দাউল্লাহ। তিন দিনের সফরে চলতি মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় আসবেন তিনি। দুই দেশ সুলতানের সফরকে কেন্দ্র করে চারটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুলতানের সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। সুলতানের সফরের জন্য ব্রুনাই থেকে জ্বালানি আমদানি, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ, সরাসরি বিমান ভ্রমণ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তিন দিনের সফরের একদিন মূলত আনুষ্ঠানিকতা। প্রথম দিন তিনি আসবেন, দ্বিতীয় দিন প্রধানত বৈঠক এবং তৃতীয় দিন তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। এ পর্যায়ে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার ওপর। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর সফরের পুরো বিষয়টি রূপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিল ২০১৯ সালে ব্রুনাই সফর করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব জ্বালানি সংকটে পড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বাজারের বাইরে বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
ব্রুনাই এরই মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দুই দেশ জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি করবে। এর আগে, বাংলাদেশ এবং ব্রুনাই এপ্রিল ২০১৯ সালে একটি জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে শেষ হয়েছিল। এই চুক্তি আবার নবায়ন করা হবে।
সুলতানের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এর আগে বলেন, সুলতানের সফরের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। আর জ্বালানির দিক থেকে বাংলাদেশ ডিজেল আমদানিতে কাজ করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্রুনাইয়ের কাছ থেকে জ্বালানি সংক্রান্ত চুক্তি নবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশও ভাবছে, বিকল্প বাজার থেকে যদি প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে জ্বালানি সংগ্রহ করা যায়, তাহলে ক্ষতি কী। দেশ থেকে জ্বালানি কিনবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, জ্বালানি ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ ও সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ ব্রুনাইয়ে পেশাদার, দক্ষ, আধা-দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্রুনাই তাদের ২০৩৫ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে চায়। এর মাধ্যমে তারা তাদের মেগা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে চায়। তবে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্রুনাইয়ের সঙ্গে একমত হয়েছে। বর্তমানে দেশে চিকিৎসক ও নার্সের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেখানে পেশাদার পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। ফলে অন্য দেশে ট্রানজিট করে সেখানে যেতে হয়। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে জনশক্তি রপ্তানির খরচ কমবে।
সূত্রমতে, মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ব্রুনাইয়ের সুলতানের আসন্ন সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জলজ চাষ, প্রাণী ও মৎস্য, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, সহ সব বিষয়ে আলোচনা হবে। শিপিং, শিক্ষা, যুব, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বৈঠকে বাংলাদেশ আসিয়ানের সংলাপ অংশীদার হতে দেশটির সহযোগিতা চাইবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ব্রুনাইয়ের সহযোগিতা চাইবে ঢাকা। বৈঠকে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক উসকানিও তুলে ধরা হবে।
প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, কৌশলগত দিক থেকে এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলেও বাংলাদেশ প্রশিক্ষণভিত্তিক সহযোগিতা বাড়াতে চায়। ব্রুনিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ডিফেন্স কলেজে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই সহযোগিতা আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বাড়াবে দুই দেশ।
কূটনীতিকরা বলছেন, কৌশলগত ও বাণিজ্যিক কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ইতিমধ্যেই পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্রুনাইসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো আসিয়ান জোটের সদস্য হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে। এর পাশাপাশি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর সাথে ব্যবসা আছে। তাই বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চায়।