ডোলমা খাং চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা
নেপালে হিমালয়ের নতুন চূড়ায় প্রথমবারের মতো লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেছেন চার বাংলাদেশি। গত বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় তারা গৌরী শংকর হিমালয় রেঞ্জের ২০ হাজার ৭৭৪ ফুট উচ্চতায় বিপজ্জনক ডোলমা খাং চূড়ায় পা রাখেন। বাংলাদেশি পর্বতারোহীরা হলেন দুইবারের এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত, কাজী বাহালুল মজনু বিপ্লব, ইকরামুল হাসান শাকিল ও রিয়াসাদ সানভি। এই দুঃসাহসিক কাজে তাদের সাথে ছিলেন নেপালী দলের কিলু পেম্বা শেরপা এবং নিমা নুরু শেরপা।
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দোলমা খাং অভিযানে গিয়েছিলেন ছয় পর্বতারোহী। অভিযাত্রীরা অবশেষে নতুন শিখর জয় করতে পেরে খুশি। এম এ মুহিত বলেন, ‘আমরা প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে ডোলমা খাং এবং আরোহণ করতে পেরে আনন্দিত।’
যদিও এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ‘ডোগারি হিমেল’ চূড়ায় উভয় দেশের পতাকা উত্তোলন। এই ২২,৫০০ ফুট উচ্চ শৃঙ্গ জয় করার লক্ষ্যে অক্টোবরের মাঝামাঝি কাঠমান্ডু থেকে দুই দেশের আটজন অভিযাত্রী যাত্রা করেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা তাদের পথ খুঁজে না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
দলনেতা এম এ মুহিত বলেন, তারা ১২ অক্টোবর পশ্চিম নেপালের রুকুম জেলার কাংরি থেকে যাত্রা শুরু করেন। জিপে করে তাকসারা যান। এরপর শুরু হয় ডোগারি হিমাল বেসক্যাম্পের দিকে ট্রেকিং। আগে কখনো ডোগারি হিমালয় ট্রেক না করে, বেস ক্যাম্পে যাওয়ার পথ জানার জন্য তিনি মাইকোট গ্রামের একজন ভক্ত পুন মাগার নামে একজন গাইডকে ভাড়া করেছিলেন। তারা দোল ও ফেদি নামক স্থান পেরিয়ে ১৫ হাজার ৯২ ফুট উচ্চতায় নিমকুন্ড ফুলগাড়ী উপত্যকায় ক্যাম্প করে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত এ ধরনের জায়গাগুলো এ সময় ঘাসে ঢাকা থাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত নেপালের হিমালয় প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে ৩-৪ ফুট বরফে ঢাকা ছিল। তারা সেখানে দুই দিন অবস্থান করে এবং বেস ক্যাম্পের সন্ধানে আরও উঁচুতে যাওয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু ৫০০০ মিটারের কাছাকাছি আসার পর ৭-৮ ফুট উঁচু তুষারপাতের কারণে সামনে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর মধ্যে, যখন আবার তুষারপাত শুরু হয়, পর্বতারোহীরা ২৪ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন এবং নেপাল দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপার সাথে আলোচনা করার পর ডোগারি হিমাল অভিযান পরিত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তবে আয়োজক ইমাজিন নেপালের সঙ্গে আলোচনার পর হাল না ছেড়ে ডোলমা খাং চূড়ায় আরোহোন করা হয়েছে বলে জানান মুহিত।
২৮শে অক্টোবর, পর্বতারোহীরা কাঠমান্ডু থেকে সিমিগাও তাদের যাত্রা শুরু করে। ৩০ অক্টোবর, তারা ১২,২৭০ ফুট উচ্চতায় বেডিং গ্রামের বেস ক্যাম্পে পৌঁছেছিল। সেখান থেকে ১ নভেম্বর দুপুরে ১৬ হাজার ৭৬ ফুট উচ্চতায় হাই ক্যাম্পে পৌঁছান। তারপর চূড়ার চূড়ান্ত ট্রেকিং শুরু হয়। প্রথমে রক বোল্ডার পেরিয়ে বিকেল ৩টার দিকে বরফে ঢাকা প্রান্তরের কাছে যান। সেখান থেকে ক্র্যাম্পনসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি সরঞ্জাম পরে দড়িতে বেঁধে যাত্রা করেন। সকাল ৬ টার দিকে ৭০ থেকে ৯০ ডিগ্রিতে কয়েকশ মিটার খাড়া দেয়ালের নীচে পৌঁছান। দড়ি আরোহণ শুরু হয় কঠিন জুমা আরোহণের সাথে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ যিনি দড়িতে ছিলেন, তার পায়ের চাপে বরফ-পাথর পড়ে যাচ্ছিল, দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। এম এ মুহিত বলেন, কঠিন চুড়ার পর তারা প্রায় ২৫ মিটার বিপজ্জনক সরু রিজ লাইন অতিক্রম করে ডোলমা খাংয়ের চূড়ায় পৌঁছেছে। অভিযানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং ইমাজিন নেপাল।