ডেঙ্গু পরিস্থিতি।১০ জেলায় রোগী বেশী।আরও ৮ জন মারা গেছে, ২৩৩১ নতুন আক্রান্ত
দেশের ১০টি জেলার মানুষ এ বছর ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যাও বেশি। এসব জেলায় নির্মাণাধীন ভবন ও বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জেলাগুলিকে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ওই ১০ জেলায় সিটি করপোরেশন বা পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ হাজার ৩৩১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, যার ৩৮ শতাংশ ওই ১০ জেলায়।
১০টি জেলা হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় এসব এলাকায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি। অবিরাম বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে এডিস মশার লার্ভাতে পানি জমে যা ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায়। এখন পর্যন্ত এই ১০টি জেলায় অর্ধেকেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ঢাকায় ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, বরিশালে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফরিদপুরে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, চাঁদপুরে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। লক্ষ্মীপুরে, পিরোজপুরে ১.৮০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ১.৬০ শতাংশ শনাক্ত করা হয়েছে।
ঢাকার পর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, “এবার এখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। রোগী অনুযায়ী হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. বরিশালের সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, বছরের শুরুতে আমি যে ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি তাদের বেশির ভাগেরই ঢাকা ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। পরে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যায়। কীটতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন সাইট পরিদর্শন করেছেন। মশার লার্ভা শনাক্তের কাজ চলছে। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হয়েছে।
ন্যাশনাল প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের (নিপসাম) পরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘২০১৯ সালের আগে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছিল না। কিন্তু এবার আর কোনো জেলা বাকি নেই। ঢাকার বাইরে এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমরা এখনো শুধু ঢাকার কথাই ভাবছি। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও জটিল। আমরা যে প্রচারাভিযান চালাচ্ছি তা ঢাকায় এডিস ইজিপ্টি প্রজাতিকে ঘিরে। অ্যালবোপিকটাস কলা গাছের অভ্যন্তরে বৃদ্ধি পায় যদিও এটি ছোট এবং পরিষ্কার পানিতে, ফুলের টবে জন্মায়। ঢাকার বাইরে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকার বাইরেও নগরায়ন হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু নির্মূল কার্যক্রম নেই। এ কারণে এসব জেলায় বেশি রোগীর সমাগম হচ্ছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, “দেশের ১০০ টিরও বেশি মামলা রয়েছে এমন জেলাগুলিকে মূলত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই টাইলটি তৈরি করা হয়েছে যে উদ্দেশ্যে। সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা সেসব এলাকায় সংক্রমণ কমাতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “ওই ১০টি জেলার হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় একটি বড় সমস্যা হলো তরল ব্যবস্থাপনা, এমনকি কিট, স্যালাইন, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে।এছাড়া সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এই মশাবাহিত রোগে ৫৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে মারা গেছে ৩০৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত আটজনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে মারা গেছেন ২ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩১ জন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪২ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৫ হাজার ৩২৭ এবং ঢাকার বাইরে ৬১ হাজার ৫১৫ জন।