• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ডেঙ্গু পরিস্থিতি।প্লাটিলেট কিটের দাম ইচ্ছেমতো, ওষুধ প্রশাসন ঘুম

    আজিমপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমএইচ) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার প্লাটিলেট  ৮০০০ মিলিলিটারে নেমে এসেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে রোববার তার শরীরে একটি ব্যাগ (২৫০ মিলি) অ্যাপারেসিস প্লেটলেট দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে খরচ হয় দুই হাজার টাকা। হাসপাতাল তিনটি মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি অ্যাপারেসিস প্লেটলেট পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু দৈনিক চাহিদা একশর বেশি। ফলে অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এপারেসিস প্লেটলেট নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

    আতিকুর রহমান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৫,০০০ এ নেমে আসায় ডাক্তার তাকে প্লেটলেট দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্লেটলেট পেতে আবেদনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। তাই স্বজনরা তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। অ্যাপারেসিস প্লেটলেটের একটি ব্যাগের দাম ১৫,০০০ টাকা।

    গত সপ্তাহে ফরিদপুর থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন আরিফুল ইসলাম। তার প্লাটিলেট  কাউন্ট ছিল ৩৫,০০০ পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ২৮ হাজার টাকা দামের এক ব্যাগ অ্যাপারেসিস প্লাটিলেট  দেওয়া হয়।

    জটিল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অ্যাপারেসিস প্লাটিলেট  প্রয়োজন। জটিল সময় পার করতে রোগীর শরীরে তিন থেকে চার ব্যাগ প্লাটিলেট  দিতে হয়। তবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে প্লাটিলেট  দামে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে এক ব্যাগ প্লেটলেটের দাম ২ হাজার টাকা, উল্টো বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একই রোগের চিকিত্সার ব্যয়ের এত বড় বৈষম্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। তারা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতালে অ্যাপারেসিস প্লাটিলেট  দাম ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা হতে পারে। এর বেশি কখনই নয়।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঢামেক হাসপাতালে অ্যাপারেসিস প্লেটলেট নিতে দেড়শ থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়। ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল, ন্যাশনাল ক্যান্সার হাসপাতালে এই মূল্যে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ল্যাবএইড, স্কয়ার, গ্রিনলাইফ, মাল্টিকেয়ার, বেটার লাইফ, পুলিশ লাইনস, সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ রাজধানীর অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাপারেসিস প্লাটিলেটের  জন্য ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা নিচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর সাধারণ চিকিৎসায় রোগীপ্রতি খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, বেসরকারি হাসপাতালে লাখ টাকা। দেশের সর্বোচ্চ মানের বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ হয় তিন থেকে চার লাখ টাকা। লাগামহীন স্বাস্থ্য ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি হাসপাতালের তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

    ওষুধ প্রশাসন কিছুই জানে না

    শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল হক বলেন, এ বছর এপারেসিস প্লাটিলেট  কিটের দাম দুবার বাড়ানো হয়েছে। বছরের শুরুতে এই কিটের দাম ছিল ১৩ হাজার টাকা। জুন মাসে ১৪ হাজার। জুলাই মাসে তা বাড়িয়ে ১৪,৫০০ করা হয়। অ্যাপারেসিস প্লেটলেটের খরচ কমাতে কিটগুলির খরচ নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

    মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এইচএএম নাজমুল আহসান বলেন, এক ব্যাগ প্লাটিলেটের  জন্য ২৮ হাজার টাকা নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ পর্যালোচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

    ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, তিনটি কোম্পানি অ্যাপারেসিস প্লেটলেট কিট সরবরাহ করে। ডায়মেড গ্রুপ, জনতা ট্রেডার্স এবং ট্রেডসওয়ার্থ। প্লাটিলেটের চাহিদা বাড়লে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পর্যায়ক্রমে কিটের দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে।

    ডায়মেড গ্রুপ সর্বোচ্চ কিট সরবরাহ করে। এই গ্রুপের ব্যবস্থাপক হেমন্ত কুমার জানান, ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্লেটলেট কিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। সামনে আরেকটি রাউন্ড হবে। কারণ শুল্ক কর আগে ১৬ শতাংশ ছিল, এখন তা বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন চালান আসার সময় দাম বাড়বে।

    তবে প্লাটিলেট কিটের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কিছুই জানে না। সরকারি সংস্থার উপ-পরিচালক মো. নুরুল আলম বলেন, টু-ফেজ কিটের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ওষুধ প্রশাসন জানে না। প্লেটলেট কিটের দাম বাড়ানো নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। এসব জিনিসের দাম বাড়াতে হলে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়।

    বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কর্মসূচির আওতায় গত বছর ১৭টি রক্ত পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে একটি পরীক্ষাও করা হচ্ছে না।