• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ডেঙ্গু পরিস্থিতি।ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন রোগী বেড়েছে ৯ গুণ

    হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ঢাকার বাইরে এই হার বেশি। গত এক মাসে ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৯ গুণ বেড়েছে। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় রোগীরা ঢাকামুখী হচ্ছেন। বর্ধিত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম না থাকায় এবং চাহিদার তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

    শুক্রবার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে যে গত একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১,৭৫৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৯২ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৫ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় আটজন এবং ঢাকার বাইরে দুজন মারা গেছেন।

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬১ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৩ হাজার ৪৫৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৮ হাজার ১৯ জন। ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে বাংলাদেশে এত মৃত্যুর মুখ দেখেনি।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৫০৯ জন। গতকাল এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৫৮। ৩ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ১ হাজার ২২ জন। গতকাল এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৬৮ জন। সে হিসেবে এ সময়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগী বেড়েছে চার গুণ। বর্তমানে সারাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯ হাজার ২৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসাধীন বরিশাল জেলা; ৩৩৯রোগী। এ ছাড়া পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর এবং লক্ষ্মীপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর ও নরসিংদীতে ১০০ থেকে ২০০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জেলা ঝুঁকিপূর্ণ।

    গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমএইচ) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের সপ্তম তলায় (মেডিসিন বিভাগ) যাওয়ার দুই সিঁড়ির মাঝখানে আটকে আছেন আবদুল আজিজ। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। দুই দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। অবস্থা জটিল হলে ডিএমকে হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। ঢাকার বাইরে থেকে আরও কয়েকজন রোগী দেখা গেছে এই হাসপাতালে। তাদের অনেকেই স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে এসেছেন।

    ডিএমকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে এ হাসপাতালে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৩০৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডিএমকে হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

    ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ রোগীই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন। এ কারণে সুস্থ হতে সময় লাগে। ঢাকার বাইরে অনেক পরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। জেলা ও উপজেলায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই নতুন রোগী। এ ছাড়া এসব এলাকার চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগীদের পরিচালনার অভিজ্ঞতা কম।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও মশা গবেষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকার বাইরে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। জেলা ও উপজেলায় প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণে অনেক রোগীই হিসাবহীন থেকে যায়।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের আনা ও সুস্থ করার ক্ষেত্রে রোগী ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।