• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুও

    ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও জ্যামিতিক হারে বাড়ছে গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে এই রোগে ১৩ জন মারা গেছে। বিপরীতে, জুনের মাত্র ১২ দিনে সমান সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে জুন মাসে।

    ২০২২ সালের জুন মাসে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময়ে, ৭৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২১ সালের জুনে, ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তখন কেউ মারা যায়নি। ২০২০ সালের জুনেও কেউ মারা যায়নি। এ সময় ২০ জন রোগী শনাক্ত হয়। ২০১৯ সালের জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৮৪ জন। ওই মাসে সাতজন মারা যান।

    বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছে। কারণ তারা দেরিতে হাসপাতালে যাচ্ছে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণকে শক সিনড্রোম বলে। এবার বদলেছে ডেঙ্গুর ধরন। এর আগে ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম লক্ষণ ছিল শরীরে ফুসকুড়ি। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের র্যাশ দেখা যাচ্ছে না। এ সময় হেমোরেজিক ডেঙ্গু বাড়ছে। রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। রক্তপাতের উচ্চ ঝুঁকি বেশি মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে। এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, যা ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক।

    সরকারের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে ছয় গুণ। আগামী জুলাই ও আগস্ট মাস আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এ সময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়। সরকারি হাসপাতালে বিকল্প ব্যবস্থায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮০ জন। এ বছর এ পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছে। এ সময় ১ হাজার ৩৬৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৩৯০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ৬৫০ জন নথিভুক্ত রয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫৬২ জন।

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (সংক্রামক রোগ) অধ্যাপক ডা: বি-নজির আহমেদ বলেন, এবার একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের শক সিনড্রোমে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই কারো ডেঙ্গু হলে ধারণা করা হয় শক সিনড্রোম হতে পারে। এ জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রচুর পানি পান কর. জ্বর হওয়ার সাথে সাথে একজনকে পরীক্ষা করা উচিত।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, শক সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও হার্টও অকার্যকর হয়ে পড়ে। . ডেঙ্গু সংক্রামিত এডিস মশা শরীরে কামড়ানোর পর, ভাইরাসটি রক্তের মনোসাইটগুলিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে জীবাণু হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার এবং কিডনিতে প্রবেশ করে এবং উচ্চ হারে বৃদ্ধি পায়, এই গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলির কার্যকারিতা নষ্ট করে। এটি বিভিন্ন অঙ্গের কোষের ঝিল্লিকে আক্রমণ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। মূত্র উৎপাদনের কিডনির কার্যকারিতা কমে যায় এবং লিভার অকার্যকর হয়ে পড়ে।

    বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, এটি ডেঙ্গুর একটি পরিবর্তিত রূপ। ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে’ আক্রান্ত সবাই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন। মশা যাতে কামড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে মশা নিধনের কাজ চলছে।