• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ডেঙ্গুতেও আইসিইউ সংকট

    সেন্ট জোসেফ স্কুলের ছাত্রী ১৩ বছর বয়সী হাবিবা সুলতানা। তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শ্যামলী শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পাঁচ দিন জ্বর থাকার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে সাপোর্টের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা না থাকায় সাধারণ ওয়ার্ডে প্রাণঘাতী চিকিৎসা চলছে তার। হাবিবার বাবা একজন পুলিশ অফিসার। গতকাল রোববার রাজধানীর পাঁচ থেকে ছয়টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও আইসিইউ বেড পাওয়া যায়নি।

    একই অবস্থা রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা আয়েশা বেগমের শিশু সন্তান সৈকতের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। চারদিন পর শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউ বেড খালি না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে হাবিবার মতো অপেক্ষা করতে বলছে। তারা বলছেন, অক্টোবরের শুরু থেকেই আইসিইউ সংকট বেড়েছে। বেডের অভাবে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে।

    ডেঙ্গুর বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে এমন অবস্থা শুধু শিশু হাসপাতালেই নয়, রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও। দেশে যখন করোনার সংক্রমণ আতঙ্কজনক, তখনের চিত্রটা যেন ফিরে এল আইসিইউ শয্যাগুলো কাঁদছে। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট উপলব্ধ না থাকায় রোগীদের সাথে স্বজনদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের ৩৫ শতাংশ শিশু। যারা চিকিৎসাধীন তাদের একটি বড় অংশ শক সিনড্রোমের সম্মুখীন হচ্ছে।

    বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, আগেও আইসিইউ সংকট ছিল। ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও তীব্র হয়েছে। আইসিইউ শয্যার প্রয়োজন ৩২ জন রোগী অপেক্ষা করছেন। এবার ডেঙ্গু রোগীদের বেশ কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাবের কারণে ক্রিটিক্যাল অবস্থা দ্রুত গড়ে উঠছে। এ সেবা দিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গু সংকটে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

    রাজধানীর মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালের আইসিইউতে ৩০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ডেঙ্গু রোগী জটিলতা নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেওয়ার পর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে এমন অনেক রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে । আইসিইউতে দ্রুত ভর্তি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার জন্য লিখিত পরামর্শ দেওয়া হয়। ডিএমকে হাসপাতালে ৮০ টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে তবে তাদের বেশিরভাগই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের দখলে রয়েছে।

    অন্যদিকে, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার স্কয়ার, ইউনাইটেড বা এভারকেয়ারের মতো বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রোগীর চিকিৎসা করাতে পারে না।

    WHO নির্দেশিকা অনুসারে, মোট হাসপাতালের শয্যার ১০ শতাংশে আইসিইউ থাকার কথা, তবে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে একটিও নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৩ হাজার শয্যার মধ্যে ৩০০ আইসিইউ শয্যা থাকতে হবে। কিন্তু আছে মাত্র ৮০টি।

    এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন, চলতি মৌসুমে ৩১ হাজার রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং শক সিনড্রোম হলে তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের প্রয়োজনীয় আইসিইউ বা পিআইসিইউ নেই। ফলে ভবিষ্যতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে।

    জনস্বাস্থ্য ডা: লেনিন চৌধুরী বলেন, এবার একসঙ্গে বেশ কয়েক ধরনের জ্বর দেখা দিয়েছে। এদের মধ্যে ডেঙ্গু, করোনা ও সর্দিজ্বর বেশি দেখা যায়। এসব ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই দুই থেকে তিন দিন বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই অপেক্ষা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আইসিইউ ও পিআইসিইউ বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শক সিনড্রোমে তাদের শরীরে তরলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং রক্তের প্লেটলেট কমে যায়। ফলে তাদের অবিলম্বে নিবিড় চিকিৎসা প্রয়োজন।

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৪৮ শতাংশের শক সিনড্রোম ছিল। তাদের একটি বড় অংশ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩৪ জন। চলতি মাসের ২৩ তারিখে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ে ৫৮ জন মারা গেছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১৩ জন।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির  বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। আমাদের প্রস্তুতি হিসেবে রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি করোনা হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

    মন্তব্য করুন