• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ডিমের বাজার।জেনে নিন অস্থিরতার কারণ, সমাধানের উপায় কী

    প্রতিদিনের বাজারে গেলে সাধারণ মানুষ এমনিতেই হাঁপাচ্ছেন। মাছ-মাংসের চড়া দামে যখন দরিদ্র মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যায়, তখন মাংস ভরা পণ্যের বাজারও অস্থির। রেকর্ড দামে ডিম সংকটাপন্ন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। গত এক সপ্তাহে প্রতিটি ডিমের দাম বেড়েছে অন্তত তিন টাকা। খুচরা বিক্রি এখনও রেকর্ড গতিতে চলছে, যদিও পাইকারিতে কিছু লাগাম টানা হয়েছে।

    গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। তবে একটি হালি কিনতে ক্রেতাকে এখনও ৬০ টাকা দিতে হচ্ছে। ডিমের বাজার এতটা অস্থির হয়ে ওঠার ঘটনা নতুন নয়। গত বছরের আগস্টেও একইভাবে টনক নড়ে ডিমের বাজার। এরপর জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বাজারে সিন্ডিকেটের মূল্যবৃদ্ধির প্রমাণ পায়। বাজার কারসাজি খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছিল সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে কেন দাম বাড়ছে তা সবাই জানে, কিন্তু সমাধানের পথে কেউ হাঁটেন না। দফায় দফায় মিটিং, আঁকড়ে ধরা, নির্দেশনা—কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এক বছর পর হঠাৎ করে ডিমের দাম বেড়ে গেলে গত শনিবার থেকে অভিযান শুরু করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে গতকাল বৈঠক করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তরও আজ সকালে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সভা ডেকেছে। এত কিছুর পরও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। খাত সংশ্লিষ্টরা দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, চাহিদার তথ্যের অভাব, কৃষি বিপণন আইনের দুর্বলতা, উৎপাদন হ্রাস, কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হওয়া এবং কৃষকদের নীতিগত সহায়তা না দেওয়াকে দায়ী করেছেন। দাম অন্যদিকে মাছসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ডিমের ওপর চাপ থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

    একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা

    প্রতি মাসে পশুসম্পদ অধিদপ্তরে তথ্য পাঠালেও খামার পর্যায়ে ডিম উৎপাদনের খরচ প্রকাশ করা হয়নি। এই প্রথম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ডিমের উৎপাদন খরচ কত এবং খুচরা বাজারে কত টাকা বিক্রি হবে তা নিয়ে মুখ খুললেন রেজাউল করিম। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, একটি ডিম উৎপাদনে মুরগির খাদ্য, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের খরচসহ অন্যান্য উপকরণসহ সাড়ে ১০ টাকা খরচ হয়। তদনুসারে, একটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।

    তবে মন্ত্রীর এ ঘোষণার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, ডিমের দাম ১২ টাকার নিচে নামবে না। অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, তাদের উৎপাদন খরচের হিসাব করলে খুচরা বাজারে ডিমের দাম হওয়া উচিত ১৩ টাকা।

    এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ রায়জুল হক বলেন, আমরা জুলাই মাসে খামার পর্যায়ে ডিমের উৎপাদন খরচ হিসাব করেছি। এর মধ্যে মুরগির খাদ্যসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়েনি। ফলে ধারণা করা যায় আগস্ট মাসে ডিমের উৎপাদন খরচ একই থাকবে।প্রতি মাসে উৎপাদন খরচ হিসাব করা হবে।উৎপাদন খরচ কমলে ডিমের দামও কমবে।এটা স্থায়ী নয়।’

    দুই মন্ত্রণালয়ে ঠেলাঠেলি

    ডিমের মূল্য নির্ধারণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ডিমের দাম বাড়লে পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের জানায় যে তারা উৎপাদনের জন্য দায়ী নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার তাদের নেই। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডিমের বিষয়টি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেখছে। গতকাল দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাজারে লাগাম টেনে ধরতে দাম নির্ধারণ ও ডিম আমদানি নিয়ে দুই মন্ত্রী ভিন্ন কথা বলেছেন। রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলে এক কোটি ‘ফ্যামিলি কার্ড হোল্ডার’ স্বল্প আয়ের পরিবারের মধ্যে পণ্য বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ডিমের দাম নির্ধারণ করলে বাজার, এটি ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা জাতীয় অধিদপ্তর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইচ্ছামতো ডিম আমদানি করতে পারে না। সেক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। আশা করছি, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।