ডিজিটাল হুন্ডিতে পাচার হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা
‘ডিজিটাল হুন্ডি’ দেশ থেকে অর্থ পাচারের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। নিরাপদ মোবাইল অ্যাপ কমিউনিকেশন এবং মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা (এমএফএস) ব্যবহার করে বিদেশ থেকে দেশে প্রাপকের কাছে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা। প্রবাসীদের স্বজনরা টাকা পাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে।
কিছু এমএফএস এজেন্ট লোভনীয় কমিশনের বিনিময়ে এই অনৈতিক কার্যকলাপে সহায়তা করছে। সম্প্রতি এ ধরনের তিন এজেন্টের লেনদেন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছে তারা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচারকারীরা নানা কৌশল অবলম্বন করে। এর মধ্যে হুন্ডি অন্যতম। এখন তারা এমএফএস সেবা ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডি ব্যবসা চালাচ্ছে। সম্প্রতি এ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত দুই উন্নয়ন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের একজন ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুরো নেটওয়ার্ককে জানিয়েছেন। এরকম আরও কিছু হুন্ডি লেনদেনের তদন্ত করা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত মানি লন্ডারিং চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে কিছু অসাধু এমএফএস এজেন্ট বিদেশে অর্থ পাচার করছে। বিদেশে অবস্থানরত হুন্ডি চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশে ফেরত না পাঠিয়ে নিজেদের কাছেই রাখে।
এদেশে অবস্থানরত চোরাকারবারীরা তাদের সঙ্গে যোগসাজশে টাকা বিদেশে পাচার করছে। মানি লন্ডারিং এজেন্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, নোয়াখালীর চাটখিলে আদর্শ টেলিকম, বাবর টেলিকম এবং নিউ শাড়ি গ্যালারি অ্যান্ড কসমেটিকস নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করে আসছে এমএফএস এজেন্টরা। এর সঙ্গে জড়িত এজেন্ট শাহাদাত হোসেন ও বলাই চন্দ্র দাসকে গত ১৯ এপ্রিল চাটখিলের দক্ষিণ রেজ্জাকপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে অর্থ পাচারে ব্যবহৃত এজেন্টের সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, সাতটি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ, চেকবুক, ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ ১৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে শাহাদাত হোসেন জানান, তার চাচা মানোয়ার হোসেন কাতারে থাকেন। সৌদি আরবে অবস্থানরত মানোয়ার ও মিজান এবং হংকংস্থ মমিনসহ বেশ কয়েকজন বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে বাংলাদেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছেই রেখেছিলেন। এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও আইএমওর মাধ্যমে শাহাদাতকে প্রাপকের নাম ও মোবাইল ব্যাঙ্কিং নম্বর জানান। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠাতেন শাহাদাত। এর আগেও তার ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আসছিল। তিনি দাবি করেন, তিনি যাদের কাছে টাকা পাঠাতেন তাদের তিনি চেনেন না।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শাহাদাত ব্যাংকে কারা টাকা জমা দিতেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাচারকারীরা দেশে প্রাপকের কাছে হস্তান্তরের জন্য এজেন্টের কাছে অর্থ প্রদান করে। এর বিনিময়ে বিদেশে এই চক্রের সদস্যদের কাছে জমা রাখা প্রবাসীর বৈদেশিক মুদ্রা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
এজেন্ট লেনদেন মনিটরিং: মোবাইল ব্যাংকিং ফার্ম বিকাশের কর্পোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, আমরা কখনই চাই না আমাদের প্ল্যাটফর্ম কোনো অবৈধ কাজে ব্যবহার হোক। এই কারণে, এজেন্টদের লেনদেন প্রযুক্তিগতভাবে চব্বিশ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর ভিত্তিতে, সন্দেহজনক গতিবিধি রিপোর্ট (SAR) এবং সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (STR) তৈরি করা হয়। সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের BFIU (Bangladesh Financial Intelligence Unit) এ পাঠানো হয়। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। একইভাবে, অ্যাকাউন্ট ব্লক করা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে জানানোর মতো পদক্ষেপগুলিও বিকাশকারী দ্বারা নেওয়া হয়। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য বা সহায়তা চাইলে তাও দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বিকাশের কোনো এক্সক্লুসিভ এজেন্ট নেই। এটি দেখা যায় যে একজন এজেন্ট একই সাথে সমস্ত এমএফএস এর এজেন্ট। কিন্তু মানুষ সব এমএফএস এজেন্টকে বিকাশ এজেন্ট হিসেবে জানে কারণ বিকাশের গ্রাহক বেশি।