• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ডামাডোল নেই, ভোটাররাও উদাসীন

    রোববার সকালে খুলনা নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন। এবারের মেয়র নির্বাচন কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তখন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। এমনটা হলে নির্বাচন হবে না। ভোট দিতে যাব কি না পরে ভেবে দেখব।

    ইজিবাইকে রূপসা ঘাটে যাওয়ার পথে কথা হয় যাত্রী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। আলাপচারিতায় এই স্কুল শিক্ষক বলেন, বিএনপি নির্বাচন না করলে নির্বাচন হবে একতরফা। ভোটারদের আগ্রহও কমবে। শুধু এ দুজন নয়, নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও মনে করছেন, বিএনপি প্রার্থী না দিলে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে না, উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও কম হতে পারে। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীও একই কথা মনে করেন।

    সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা। নেতাকর্মীরা ভোট দিতেও যাবে না।

    এর আগে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চায় না। জাতীয় পার্টি, জামায়াত, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিচ্ছে না।

    আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকও মনে করেন, বিএনপি প্রার্থী না দিলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত মেয়র প্রার্থী হিসেবে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এ ছাড়া ভোটার উপস্থিতিও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

    সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, দেশের প্রধান দুটি দলের একটি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে নির্বাচন হবে কীভাবে?

    মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন- ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়াল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মুশফিকুর রহমান মুশফিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগুয়ান-৭১-এর আহ্বায়ক মো. আবদুল্লাহ চৌধুরী। আবদুল আউয়াল প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। গত নির্বাচনে মুশফিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী হলেও এবার দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। আর আবদুল্লাহ চৌধুরী মেডিকেল কলেজের ছাত্র, তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

    ২০১৮ সালে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।

    খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, যেকোনো নির্বাচনের বিস্তারিত ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। তবে এবার কেসিসি নির্বাচনের বিস্তারিত ঘোষণার পর নগরীতে এখনো সেই পরিবেশ তৈরি হয়নি। ভোটাররা নির্বাচনে আগ্রহী নয়।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে মেয়র পদে তিন প্রার্থীর কারোরই জয়ের সম্ভাবনা নেই। ফলে ভোটের ফল নিয়ে চিন্তিত নন তারা। এখন তাদের ভাবনা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে।

    মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সহজেই জয়ী হবে। বিএনপি প্রার্থী না দিলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে- এমন ধারণাও আমরা রয়েছি।

    এদিকে কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র নির্বাচনের মেজাজ কোথাও দেখা যায়নি। অন্যান্য নির্বাচনের আগে বিভিন্ন এলাকায় মেয়র প্রার্থীদের ব্যাপক পোস্টার ছিল। এবারের চিত্র ভিন্ন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কোনো পোস্টার-পেজ এখনো দেখা যায়নি। একই অবস্থা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থীরও। তবে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মুশফিকের কিছু পোস্টার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ প্রতিদিনই নগরীর দু-একটি মোড়ে কয়েকজন যুবককে নিয়ে গণসংযোগ করছেন।

    মন্তব্য করুন