• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    ডলারের দাম কিছুটা কমেছে

    অধিকাংশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নির্ধারিত হারে ডলার লেনদেন করেছে। সোমবার আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্সের ওপর ব্যাংকগুলোর দর ছিল ৯০ টাকার নিচে। ফলে গতকাল ডলারের মূল্য অনেক কমেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত হার কতদিন বলবৎ থাকবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যাংকাররা। এদিকে, ব্যাংকের দাম কমলেও কার্ব মার্কেটে বা খোলা বাজারে ডলারের অবমূল্যায়ন হয়নি। গতকাল বাজারে নগদ ডলারও লেনদেন হয়েছে ৯৬-৯৬.৬০ টাকায়।

    আমদানি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিতিশীল। আমদানি শুল্ক পরিশোধের জন্য ডলার কিনতে হয়েছে ৯৭ টাকা পর্যন্ত দামে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও ৯৫ টাকা পর্যন্ত যায়। অস্থিরতার অবসান ঘটাতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এবিবি, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের একটি সমিতি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যাংকগুলির একটি সমিতি বাফেদারের সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে সব ব্যাংক একই হারে ডলার লেনদেন করবে। কোনো অবস্থাতেই দাম ৯০ টাকার বেশি হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের আলোকে বাফেদা রোববার বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের হারের প্রস্তাব দিয়েছে। সেখানে আন্তঃব্যাংক রেট ৮৯ টাকা ৮০ পয়সা। এছাড়া আমদানির জন্য দেওয়া মূল্য ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সা, রেমিট্যান্স ৮৯ টাকা ৭৫ পয়সা এবং রপ্তানিকারকদের জন্য ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা। গতকাল ছিল কার্যকরী দিন। বলা হয়, ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট হারে ডলার লেনদেন করেছে।

    ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী  বলেন, গতকাল বেফেদার নির্ধারিত হারে ডলার লেনদেন হয়েছে। সব ব্যাংক এ নিয়ম মেনে চললে প্রবাসী আয় কমবে না বলে মনে করেন তিনি। কারণ, কয়েকদিন আগেও প্রবাসীরা ৮৫ থেকে ৮ ৬ টাকা হারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এখন সে যদি ৮৯ টাকা পায়, তার চেয়ে তিন টাকা বেশি পাবে। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতির কারণে এ অস্থিতিশীলতা হয়েছে। সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে বাজার ভালো থাকবে।

    বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার ধারণ রোধে গতকাল জারি করা এক নির্দেশনার মাধ্যমে রপ্তানি বিল পাওয়ার একদিনের মধ্যে ডলার ক্যাশ ইন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক ব্যাংকের রপ্তানি আয় যাতে অন্য ব্যাংকে পাঠানো না হয় সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি বাজার সচল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল লেনদেন কম থাকায় কোনো ব্যাংকই ডলার কিনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসেনি। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি হয়েছে ৫৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রচুর ডলার বিক্রির ফলে গতকাল শেষ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা গত আগস্টে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

    সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ ডলারে। যা নিউইয়র্ক ফেডের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়। রোববার সাপ্তাহিক ছুটির পর গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকগুলো বন্ধ ছিল। তাই সোমবার ডলারে খুব কম পেমেন্ট বা বিল রয়েছে। ফলে ডলার বাজারের প্রকৃত অবস্থা দু-এক দিনে বোঝা যাচ্ছে না। এখন হঠাৎ করে ৯০ টাকার নিচে দাম কমার প্রভাব বুঝতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

    রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কয়েকদিন ধরে মাঝেমধ্যে দাম বৃদ্ধি রপ্তানিকারক ও প্রেরকদের মধ্যে বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি করেছে।

    কিছু ব্যবসায়ী আমদানির জন্য এসেছেন এবং নির্দিষ্ট হারে এলসি খুলতে চান। তারা আবার রপ্তানি বিল খালাস করতে গিয়ে উচ্চ হার চাইছে। সব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার বাইরে না গেলে বাজার ভালো থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

    মন্তব্য করুন