ট্রেন দুর্ঘটনা নয়, বরং ‘পরিকল্পিত হত্যা’: পিবিআই তদন্ত
২২ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের বিরলের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে রেললাইনের পাশে ময়না বেগমের মৃতদেহ পাওয়া প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে মনে করা হলেও, পিবিআইয়ের ছায়া তদন্তে ‘পরিকল্পিত হত্যা’র এক মর্মান্তিক চিত্র উঠে এসেছে। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় দিনাজপুর পিবিআই অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজ্জামান আশরাফ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানা গেছে, ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয়রা দিনাজপুর-পঞ্চগড় রেললাইনের পাশে ময়না বেগমের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে রেলওয়ে থানা পুলিশ এবং পিবিআই দিনাজপুরের ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আঘাতের চিহ্ন, গলায় মোড়ানো নাইলনের দড়ি এবং রেলওয়ে স্লিপারে বাঁধা দড়ি সহ বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা করে। এই তথ্য পর্যালোচনা করে দলটি সন্দেহ করে যে ঘটনাটি দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যা।
ঘটনার দিন রেলওয়ে থানায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হলেও, পিবিআই দিনাজপুরের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফের নির্দেশে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মো. নাজিমুল ইসলামের নেতৃত্বে ছায়া তদন্ত অব্যাহত ছিল। তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং সংগ্রহ করা প্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ময়না বেগমকে হত্যা করা হয়েছে এবং রেল দুর্ঘটনার ছদ্মবেশে তার লাশ রেললাইনের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।
পরবর্তীতে, ২ নভেম্বর ময়নার বাবা লাল মিয়া রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার মেয়ের স্বামী জাহিদুল ইসলাম সহ তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ৪-৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে, পিবিআই নিজস্ব উদ্যোগে এটি গ্রহণ করে এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. নাজিমুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করে।
তদন্তের ধারাবাহিকতায়, পিবিআই দল একই দিনে কোতোয়ালি থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়, প্রধান আসামি জাহিদুল ইসলাম স্বীকার করেছেন যে, ঋণ ও সুদ পরিশোধ নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে প্রায়ই তার বিবাদ লেগে থাকত। ঘটনার দিন বিকেলে বিদ্যুৎ বিলের ২০০০ টাকা আদায় করতে না পারায় সে তার স্ত্রীকে মারধর করত। পরে, রাত আনুমানিক ৯:৫০ মিনিটে, জাহিদুল তার ভাই আব্দুস সালাম এবং চাচাতো ভাই রুবেলকে সাথে নিয়ে ময়নাকে রেললাইনে নিয়ে যায় এবং নাইলনের দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে, মৃতদেহটি কাশি দিয়ে ঢেকে লাইনের স্লিপারে বেঁধে ঘটনাটিকে রেল দুর্ঘটনায় পরিণত করার চেষ্টা করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজিমুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত দ্রুত গতিতে চলছে। প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করা হলে খুব শীঘ্রই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পিবিআই দিনাজপুরের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ মামলার সার্বিক তদন্ত তদারকি করছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিদর্শক প্রদীপ কুমার রায়, পরিদর্শক মহসিন আলী, পরিদর্শক এসআই মোহাম্মদ নাজিমুল ইসলাম প্রমুখ।

