টানা বর্ষণ: ভূমিধস আরও বিপজ্জনক হতে পারে
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। কয়েকটি স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বান্দরবানে রোববার দুই স্থানে শিশুসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। অবিরাম বর্ষণে ভূমিধস আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই দিনে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে এক হাজার ৫০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলো ৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি রুট যাত্রী পরিবহনের জন্য বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। সে কারণেই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি বা তার বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ৮০০ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর আগে, আরেকটি ধাপে, ২৫০ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর আকবর শাহ ও খুলশী থানা এলাকার সাতটি পাহাড়ে লাগাতার অভিযান চালিয়ে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজনকে সতর্ক করে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ করছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, “বিজয়নগর পাহাড়, ঝিলের তিন পাহাড়, শান্তিনগর ও বেলতলিঘোনা এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। এসব পাহাড় থেকে ৫০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৩০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।” খুলশী থানার মতিঝর্ণা পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা মানুষদের শুকনো খাবার থেকে শুরু করে প্রতিদিন খাবার দেওয়া হচ্ছে।এর আগে গত শনিবার আকবর শাহ থানার বিজয়নগর ও ঝিল পাহাড়ে আড়াইশ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আকবর শাহ থানার ওসি উদ্দিন আকবর জানান, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বৈশারী ইউনিয়নে গতকাল দুপুরে একই পরিবারের শিশুসহ ৪ জন আহত হয়েছে। রোয়াংছড়ি উপজেলার চাইংয়া দানেশপাড়া এলাকায় আজ সকালে মাটিসহ বাড়ির একটি অংশ সড়কের ওপর পড়ে। আহত হয়েছেন দুইজন। গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বর্ষণে বান্দরবান জেলা শহরসহ কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। চিম্বুক, রুমা ও থানচি সড়কে ভূমিধস হয়েছে। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সদর উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। রাওয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে প্রশাসন মাইকিং করছে।
রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ১৪৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। খবর পেয়ে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ও ভেদভেদী-রাঙ্গাপানি সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। টানা বর্ষণে জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন রাঙামাটি শহরে ২৯টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে এবং ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের লোকজন বিএম ইনস্টিটিউট, রাঙামাটি বেতার কেন্দ্র, লোকনাথ মন্দির ভবনসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও বেড়েছে। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, লেকের পানি বাড়াতে কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
এদিকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাওয়া ৯ জেলেকে উদ্ধার করেছে বন বিভাগের সদস্যরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের টহল দলের সদস্যরা সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে। তারা আট দিন আগে ইলিশ মাছ ধরতে সাগরে নেমে বৈরী আবহাওয়ায় পথ হারিয়ে ফেলে। পরে ইঞ্জিনচালিত ফিশিং ট্রলারটি ভেঙ্গে গেলে জেলেরা প্রাণের আশংকা করেন।