• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেকায়দায় শিল্পকলার ডিজি

    নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রকল্পের নামে টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠলে দেউলিয়া হয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকী। অভিযোগে বলা হয়, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি অকৃতকার্য প্রার্থীদের চাকরি দেন। এ ছাড়া ছোট ছোট প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দিয়ে ঘরে বসে বিল-ভাউচার বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

    দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগে রোববার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

    গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, কোনো বিল-ভাউচারে তার স্বাক্ষর নেই। তার বিরুদ্ধে দুদকের করা অধিকাংশ অভিযোগই অপপ্রচার।

    জানা গেছে, মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন প্রমাণ ইতোমধ্যে দুদকে পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানটি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে। গতকাল ডিজিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের একপর্যায়ে দেখা দিয়েছে, অভিযোগটি তদন্ত করে তার বক্তব্য শোনা দরকার। সে লক্ষ্যে গতকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তল্লাশি দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার বক্তব্য রেকর্ড করে। তদন্ত দল অভিযোগ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সার্চ টিমের চাহিদা অনুযায়ী ডিজি ইতিমধ্যেই তথ্য সরবরাহ করেছেন। প্রয়োজন মনে করলে দল আরও তথ্য চাইতে পারে।

    দুদকের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহিমের নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিজি লাকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

    জিজ্ঞাসাবাদ শেষে লাকি সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পকলা একাডেমি ২৬ কোটি টাকা তুলতে যাচ্ছে, আসলে তা হবে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলে ফেরত গেছে আট কোটি টাকা। বাকি ১৩ কোটি টাকা বেতন-বোনাস, পৌর কর ও বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে।

    কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাকির বিরুদ্ধে ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, শত শত কোটি টাকা ভুয়া বিল ও ভাউচার আত্মসাৎ এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। .

    প্রকল্পের নামে দুর্নীতি: ডিজি লাকির বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, লাকী ডিজির দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন কর্মসূচির নামে লাখ লাখ টাকার ছোট প্রকল্প তৈরি করা হয়। এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সন্ধ্যার পর চার-পাঁচজন লোক অফিস কক্ষে বসে নামমাত্র কর্মসূচি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত অর্থবছর শেষে জুন মাসে একাডেমির সব অব্যয়কৃত আমানত পরিশোধ বা পরিশোধ করা হয়েছে।

    এর আগে চার থেকে পাঁচবার ডিজি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অডিট কখনই তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আপত্তি করেনি। তিনি প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা নিয়ে অডিট ফার্ম পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

    নিয়োগ বাণিজ্য: দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে বর্তমানে ৪৬ জন একাডেমির বিভিন্ন পদে নিযুক্ত রয়েছেন। বলা হচ্ছে, নিয়োগের জন্য বিভিন্ন পদে পরীক্ষা হলেও সব শেষে শুধু পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৪৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের মৌখিক পরীক্ষার জন্যও ডাকা হয়। আর যারা পাস করেছে তাদের অনেককে ডাকা হয়নি। চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে লাকির লোকনাট্য দলের আটজন সদস্য রয়েছেন।

    নিয়োগের নথি অনুসারে, ১২ জন নৃত্যশিল্পী, ৮ জন সংগীতশিল্পী, ৬ জন সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা, ১০ জন শিল্পী এবং তিনজন প্রশিক্ষক (পুরুষ) নির্বাচিত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই লিখিত পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিল। যন্ত্রশিল্পী পদে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় পাঁচজন উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নৃত্যশিল্পী পদে পাস করেছেন চারজন, নিয়োগ পেয়েছেন ১২ জন। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

    সাংবাদিকদের আর কি বললেন ডিজি : গতকাল দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিজিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। সে তাদের উত্তর দেয়। ডিজি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মোতায়েন করা বৈধ। ৭১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে বর্তমানে ২৪টি পদ রয়েছে।

    সাম্প্রতিক অডিট রিপোর্টে ২২৩ কোটি টাকার অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মামলায় কোনো অনিয়ম হয়নি। অডিট ফার্ম একটি প্রশ্নপত্র দিয়েছে। বর্তমানে এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ১২৭ কোটি টাকা নির্মাণাধীন। কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে অডিট ফার্ম।

    মন্তব্য করুন