• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    ঝিনুক প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে আয়ের উৎসও বটে

    ১৬ মার্চ দুপুরে। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীতে কিছু তুলছেন কয়েকজন। কাছে গিয়ে দেখা যায়, তারা সবাই নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করছে। এদের মধ্যে আদিবাসী, ক্ষত্রিয় ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে।

    এখানে যারা ঝিনুক সংগ্রহ করছে তারা সবাই ঈশানপুর, পরমেশ্বরপুর, নয়াবাদ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তারা প্রতিদিনের মতো এই নদীতে গোসল করতে আসেন। স্নানের এই সময়ে ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ বাড়িতে এই ঝিনুক রান্না করে খায়, কেউ কেউ বিক্রিও করে। প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অনেকে বাড়তি আয়ও করেন। স্থানীয়দের মতে, এই ঝিনুকগুলো রান্না করে খাওয়ালে মাংসের মতো স্বাদ হয়। চোখের জ্যোতি ঠিক থাকে।

    বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝিনুক শুধু দৃষ্টিশক্তির জন্যই ভালো নয়, প্রোটিনেরও ভালো উৎস। ঝিনুক হাঁপানি এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রনের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে। গবেষকরা আরও বলছেন, ঝিনুক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

    এই নদীতে যারা ঝিনুক সংগ্রহ করছেন তাদের একজন হলেন কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ঈশানপুর এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী লাডিকি টুডু। চার ঘণ্টায় তিনি প্রায় ৪ কেজি ঝিনুক সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর এই নদীতে ঝিনুক  (সংগ্রহ) করা হয়। এখান থেকে যে ঝিনুকগুলো পাই সেগুলো বাসায় নিয়ে রান্না করি। এর পরে আমি খোসা খুলে ভিতরে মাংসের মতো দেখতে পাই, আমি এটি রান্না করে খাই। আমরা বিক্রি করি না। এগুলো খেলে চোখের জ্যোতি ঠিক থাকে। ‘

    নয়াবাদ এলাকার জেলে সিলু দাস জানান, এখন ঠান্ডা কমে গেছে। এখন এই ঝিনুক পাওয়া যাবে। কয়েকদিন বাদে যখন আবার বৃষ্টি হবে, নদীতে জলস্তর বাড়বে, তখন আর ঝিনুকের দেখা মিলবে না।

    একই এলাকার মৎস্যজীবী শচীন দাস জানান, যে ঝিনুক সংগ্রহ করেন তিনি তা ১০ মাইল বাজারে তা বিক্রি করেন।

    এ প্রসঙ্গে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ অনুষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মারুফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রোটিনের অভাব মেটাতে শামুক ও ঝিনুক খাচ্ছে। শামুক বা ঝিনুক প্রোটিনের ভালো উৎস। এই শামুকগুলি প্রোটিনের পাশাপাশি খনিজগুলির একটি ভাল উত্স। শামুক বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রন সমৃদ্ধ। কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুবই কম। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে। শামুক ও ঝিনুক শুধু বাংলাদেশের মানুষই খায় না, জাপান, কোরিয়া, চীন প্রভৃতি বিদেশেও খায়। এটি স্যুপ আকারে এবং শুকিয়েও খাওয়া যায়। তিনি মনে করেন, এদেশে শামুক ও ঝিনুক চাষ করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

    মন্তব্য করুন