• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা

    বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। দেশে জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি জ্বালানি খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আমদানির পর বেসরকারি পর্যায়ে অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণ, পরিশোধন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

    বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) পরিশোধিত জ্বালানি তেল বাজারজাতকরণের প্রথম তিন বছরে উৎপাদিত ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলের ৬০ শতাংশ কিনবে।

    এ ছাড়া জ্বালানি পণ্য রপ্তানিরও বিধান রয়েছে নীতিমালায়। নীতিমালাটি তৈরি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই খসড়া নীতিমালার অনুলিপি কালের কণ্ঠের কাছেও রয়েছে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চায় সরকার।

    এ লক্ষ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে খসড়াটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে তাদের মতামত চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর) খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হতে পারে।

    খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, ১৯৭৭ সাল থেকে বিপিসি জ্বালানি তেল সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত।

    দেশে জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, ব্যবহার, স্থানীয় উৎপাদন ও মজুদ ক্ষমতা বিবেচনায় সরকারি খাতের তুলনায় দেশব্যাপী উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ সীমিত। সরকারের রূপকল্প ২০৪১, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন।

    বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৭০ থেকে ৭২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন টন। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধনের পর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেলসহ সরকারি বিপণন কোম্পানির মাধ্যমে সারাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।

     BPC সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, এর নির্মাণকাজ ২০২৭ সালে শেষ হবে। এর মাধ্যমে ৩ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

    জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, পেট্রোম্যাক্স, অ্যাকোয়া রিফাইনারিসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি দেশে অপরিশোধিত তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রিতে অংশ নিতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে বসুন্ধরা গ্রুপ ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি শোধনাগার স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করেছে।

    জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম তামিম বলেন, জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বাজারজাত করার জন্য সরকার বেসরকারি খাতকে যে উদ্যোগ দিচ্ছে তা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এখানে শোধনাগার একটি অংশ। আরেকটি অংশ মার্কেটিং। সরকার চাইলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরিশোধিত তেল কিনে বাজারজাত করতে পারে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেও তা বাজারে বিক্রি করা যায়। তবে বেসরকারি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মাধ্যমে এলপিজির মতো জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে।

    জ্বালানি তেল সরবরাহ ও বিপণন

    ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল বিপণন শুরুর পর প্রথম তিন বছর বেসরকারি শোধনাগারে উৎপাদিত মোট জ্বালানি তেলের ৬০ শতাংশ সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিপিসিকে সরবরাহ করতে হবে। বাকি ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল তারা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং তাদের নিজস্ব নিবন্ধিত বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারে। তবে, বিক্রয় নেটওয়ার্কের অভাবে যদি একটি বেসরকারী শোধনাগার তার ৪০ শতাংশ তেল বিক্রি করতে না পারে তবে এটি বিপিসির কাছে যেকোনো পরিমাণ বিক্রি করতে পারে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বেসরকারি শোধনাগারগুলো তাদের উৎপাদিত তেলের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবে।

    বেসরকারি উদ্যোক্তাদের যোগ্যতা

    খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, উদ্যোক্তাদের উৎপাদন, বিপণন বা জ্বালানি পণ্য সরবরাহ এবং উদ্ভিদ ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা এ বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিদেশী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি থাকতে হবে।

    বেসরকারী উদ্যোক্তা সংস্থার টার্নওভার গত পাঁচ বছরের যে কোনও তিনটিতে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০০০ কোটি টাকা বা তার সমতুল্য মার্কিন ডলার হতে হবে। বেসরকারী উদ্যোক্তা সংস্থাকে নিজস্ব বা যৌথ মালিকানায় বছরে কমপক্ষে ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানী তেল পরিশোধন বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা সম্পন্ন একটি শোধনাগার স্থাপন করতে হবে।