জাতীয়

জ্বালানির দাম বৃদ্ধি।বামপন্থীরা আন্দোলনে নামছে

জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজপথে নামছে দেশের বামপন্থী দলগুলো। এরই মধ্যে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকারবিরোধী বাম দলগুলো। মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে হরতাল, অবরোধ, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে তারা। এ ক্ষেত্রে বামপন্থী বিভিন্ন জোটের যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও চরম ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে বাম দলগুলোকে না জানিয়ে হঠাৎ করে দাম বাড়ানোয় সরকারের ওপর নাখোশ শরিক বাম দলগুলো। এরই মধ্যে কয়েকটি শরিক দল রাজপথে কর্মসূচি পালন করে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও করেছে। ১৪ দলীয় জোটের আগামী বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

বামপন্থী দল ও তাদের সমমনা ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে কর্মসূচি পালন করছে। এ নিয়ে বামপন্থীদের কয়েকটি প্রধান জোট যেমন বাম গণতান্ত্রিক জোট, ৯টি সংগঠন ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে। নবগঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের তিন বাম শরিক আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন এবং সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও রাজপথে পৃথক কর্মসূচি পালন করে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। এছাড়াও প্রবীণ বামপন্থী নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ঐক্য ন্যাপ এবং সম্প্রতি ১৪ দল থেকে বহিষ্কৃত শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদও কর্মসূচি পালন করে।

মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য ইতিমধ্যেই একাধিক বাম জোট ও দল আল্টিমেটাম দিয়েছে। ১৬ আগস্টের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একই দিনে এই জোট উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করবে। কমিশনাররা। ৯টি বামপন্থী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত আরেকটি জোট সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। এর আগে ও পরে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ সারাদেশে আরও কিছু কর্মসূচি রয়েছে বাম দলগুলোর। রাজধানীর শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও পুলিশি হামলা ও ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এসব জোট ও দলের নেতারা।

বাম দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, এসব কর্মসূচি পালনের পর বাম দলগুলোর ব্যানারে হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির চিন্তাও রয়েছে। সাতটি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং চারটি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ অধিকাংশ বাম দলও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ১৭ আগস্টের পর হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এ লক্ষ্যে সব বাম জোট ও দলের পক্ষ থেকে একযোগে কর্মসূচি পালনের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক যৌথ বৈঠকে এই যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ২১ সংগঠনের নেতারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম  বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে ভুগতে থাকা জনগণের ওপর যেভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা হলো। অত্যাচার এবং অবিচার। জনগণ অবশ্যই এর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমরাও রাজপথে কঠোর জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের ‘ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন’সহ মূল্যবৃদ্ধির অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম ও গণআন্দোলন গড়ে তুলবেন। জ্বালানী মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। এখন প্রতিবাদ ছাড়া উপায় নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ এমনিতেই সংকটে রয়েছে। তার উপরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি দুধে বিষের মতো। এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করা হবে।

১৪ দলের শরিকরা দায় নেবে না: ১৪ দলের জোটের বেশিরভাগ অংশীদার, বিশেষ করে বাম শরিকরা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করছে এবং একে সরকারের ‘একতরফা সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করছে। দলগুলোর অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৪ দল কোনো পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা করেনি। তাই তারা কোনোভাবেই এর দায় নেবে না। এর দায় আওয়ামী লীগকে নিতে হবে।

মন্তব্য করুন