• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    জেলে পরিকল্পনা, তিন মাসেই দুই তরুণ কোটিপতি

    সোনাগাজীর দুই যুবকের তরমুজ চাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। মাত্র তিন মাসে তরমুজ বিক্রি করে কোটি টাকা মুনাফা করেছেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা ছাড়া ইউটিউবে তরমুজ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি তাদের। ৬০ একর উপকূলীয় পতিত জমি ৫ মাসের লিজ নিয়ে তরমুজ চাষে এখন অভাবনীয় সাফল্যের কথা বলছেন সোনাগাজীর মানুষ।

    ‘দলীয় গ্রুপিংয়ে দলের প্রতিপক্ষের মামলায় ১৫ মাস জেলে ছিলাম। কারাগারে থাকার সময় আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাপ্তাহিক কৃষি অনুষ্ঠান দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং মুক্তি পেলে কৃষিকাজ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর চেষ্টা করব। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবার তাদের বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে অনেক কিছু বুঝে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। প্রথম বছরেই আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরল তরমুজ চাষে। কৃষিতে এতটা সফল হব তা কল্পনাও করিনি,” বলেন সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদ আনোয়ার।

    তিনি বলেন, আমরা গত বছরের ডিসেম্বরে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন খন্দকারসহ কয়েকজনকে নিয়ে তরমুজ চাষের তহবিল গঠন করি। এরপর আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরক্রিঞ্চজয় মৌজায় বড় ফেনী নদী সংলগ্ন ৬০ একর পতিত জমি লিজ নিয়ে ভিক্টর সুগার, ওশান সুগার ব্ল্যাকবেরি, বাংলালিংক ও স্থানীয় জাতের তরমুজ চাষ শুরু করি।

    তিনি আরও জানান, প্রথমে কেউ আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি না হলেও পরে এলাকার কয়েকজন আর্থিক সহায়তা দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলা উদ্দিন আলো, আমিরাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জিয়া উদ্দিন ফ্যামিল। এরই মধ্যে আমি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চারজন কৃষকের সাথে যোগাযোগ করি যারা তরমুজ চাষে সফল হয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ গ্রহণ করেছি।

    ৩ মাসে চারা রোপণ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের খরচ হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমাদের ক্ষেতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত এক মাসে ফেনী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার পাইকারদের কাছে তিন ধাপে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। স্থানীয় বাজারে আরও ১৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি।

    সরেজমিনে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরক্রিঞ্চজয় গ্রামের তরমুজ ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা বড় বড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে তরমুজ কিনছেন। এসব তরমুজ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার ফলের বাজারে বিক্রি হবে বলে জানান পাইকারি বিক্রেতারা। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর শাহপরাণ ফল বাজারের স্বত্বাধিকারী আলী আব্বাস খান সওদাগর ও মোহাম্মদ নাসির সওদাগর।

    তারা জানান, আকারে বেশ ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় উপকূলীয় এলাকা থেকে তরমুজের চাহিদা বাজারে বেশি। আমরা ১০ লাখ টাকার তরমুজ কিনেছি। এসব ক্ষেতের মালিকদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ৬৫ লাখ টাকা। তরমুজ পরিবহনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের কোনোভাবে হয়রানি করা হচ্ছে না।

    এলাকাবাসী জানায়, লবণাক্ততার কারণে এসব জমিতে তেমন ফসল হতো না। পতিত জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হবে তা ভাবা যায় না। স্থানীয়রা যেমন কম দামে তরমুজ কিনতে পারছে, তেমনি অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

    সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, এ বছর সোনাগাজীতে প্রায় ৩৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। চর এলাকায় ভালো ফলন হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে তরমুজ চাষ। তরমুজ চাষ করে দুই যুবকের ব্যাপক সাফল্যের খবর আমরা শুনেছি। ভবিষ্যতে তরমুজ চাষ অব্যাহত রাখতে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।

    মন্তব্য করুন