জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে কেএসআরএমের জালিয়াতি, ইয়ার্ড থেকে চুরি হওয়া জাহাজ জব্দ
কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (কেএসআরএম) শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে চুরি হওয়া জাহাজ এমটি মেডান জব্দ করেছে নৌ পুলিশ। কেএসআরএম নাম পরিবর্তন এবং নকল নথিগুলির মাধ্যমে মেডান শিপটি কিনেছিল। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন যে কেএসআরএম চুরি হওয়া জাহাজ কিনে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনামকে কলঙ্কিত করেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে উদ্ধার করার পর ভাটিয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ জাহাজ রক্ষার জন্য একজন প্রহরী নিয়োগ করেছে।
শিপিং বিভাগ জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন সেন্টারে জাহাজটি সালিশ চলছে। এমনকি মালয়েশিয়ার পুলিশেরকাছেও জালিয়াতির মামলা রয়েছে। কেএসআরএম চুরি হওয়া জাহাজ কেনার কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্নহয়েছে। যদিও কেএসআরএম মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাহাজটি ভাঙতে অনাপত্তিপত্র নিয়েছিল। তবে নৌ-বাণিজ্য ও বাণিজ্য অধিদফতর অনাপত্তিপত্র বাতিল করে দিয়েছে।
জানা গেছে, কুক দ্বীপের পতাকা বহনকারী এমটি মেডান জাহাজের আসল মালিক হলেন ডিয়া মেরিন প্রাইভেট লিমিটেড। সিঙ্গাপুরের নিবন্ধিত সংস্থা লিমিটেড। জাহাজটি ১৯৯১ সালে জাপানে তৈরি হয়েছিল। ডায়া মেরিন সিঙ্গাপুর জাহাজটি পরিচালনার (চার্টার্ড) করার জন্য ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর ৮২ লাখ মার্কিস ডলারে মালয়েশিয়ার অরিন এনার্জি কুয়ালালামপুরের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর ১৩ নভেম্বর, অরিন এনার্জি সিঙ্গাপুরের ডায়া মেরিনের কুয়ালালামপুরে একটি অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিল। ১৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ার লিংগি বন্দরে জাহাজটি হস্তান্তর কথা ছিল। তবে ১৬ নভেম্বর, অরিন এনার্জি জানতে পেরেছিল যে জাহাজটি মেরামত ও ক্রু পরিবর্তনের জন্য ইন্দোনেশিয়ার বন্দরে অবস্হান করছে।
সেখান থেকে আফ্রিকার পোলাও গিয়ে জাহাজের নাম পরিবর্তন করা হয়। মালয়েশিয়ায় জাহাজ না এনে নেভিগেশন সিস্টেম বন্ধ রাখায় অরিন এনার্জি মালয়েশিয়ার পুলিশের কাছে জালিয়াতির মামলা করে। পরে সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন সেন্টারে মামলা করা হয়েছিল। কেএসআরএম গ্রুপ ওই জাহাজটি কিনে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। জাহাজটির নাম পরিবর্তন করার অভিযোগে পানামার দয়ান হোল্ডিংস লিমিটেডের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডায়া মেরিন এবং কেএসআরএম গ্রুপের মধ্যে বিক্রয় এবং ক্রয়টি খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। এই কাজটি করায় আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবর্মর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
নৌপরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এমটি মেডন জাহাজটি ৩ জুন বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছেছিল, নৌপরিবহন বিভাগের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন তারপরে মালয়েশিয়ার পুলিশ কর্তৃক জালিয়াতির অভিযোগ এনে শিপিং মাস্টারকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি অনাপত্তি সনদ জারি না করার অনুরোধ করেছিলেন এবং উল্লেখ করেছিলেন যে অবৈধ জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বিদেশে তাদের খ্যাতি নষ্ট হবে। ২০ শে জুন আদালত জাহাজটিকে গ্রেপ্তারের আদেশ জারি করে।
আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পরে জাহাজটি বৃহস্পতিবার খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে গ্রেপ্তার করে নৌ পুলিশ তাদের ভাটিয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের হাতে সোপর্দ করে।
এদিকে, কেএসআরএম গ্রুপ জাহাজটির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছে যে জাহাজটির প্রয়োজনীয় সমস্ত আপডেট রয়েছে। স্ক্র্যাপ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। এর পরেও কেএসআরএম জাহাজটি ভাঙার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর এবং নৌপরিবহন ও বাণিজ্য অধিদফতর থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়েছে। তবে মামলা ও জালিয়াতির বিষয় না জনানোয় নৌপরিবহন অধিদফতর অনাপত্তিপত্র পত্র বাতিল করেছে।গত ১৯ ই মে, শিল্প মন্ত্রণালয় দশটি শর্তে জাহাজ ভাঙতে অনাপত্তি পত্র দেওয়া হয়।