জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি। ৭ বছরের পর্যবেক্ষণ
রাজধানী ঢাকার বাতাস দূষণের মাত্রা বিবেচনায় বছরের বেশির ভাগ সময়ই ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকে। কখনো কখনো তা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। শীতকালে বায়ু দূষণ সবচেয়ে খারাপ হয়। গত জানুয়ারিতে ৯টি অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর বা খারাপ দিন ছিল, যা গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জানুয়ারি। বাকি দিনগুলোতে এক দিনও বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া যায়নি। শীত কমলেও ফেব্রুয়ারিতে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে না নগরবাসী। সোমবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর গুণমানের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দূষণ কিছুটা কমলেও সাত বছরের মধ্যে এই মাসেই সর্বোচ্চ। তবে এ মাসে দূষণের দিক থেকে ঢাকাকে পেছনে ফেলেছে কুমিল্লা নগর। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চারবার দূষিত বাতাসে শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লার নাম।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পলিউশন স্টাডিজ (সিএপিএস) অনুসারে, গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হয়েছে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে।
এদিকে, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দূষণ কিছুটা কম হলেও গত সাত বছরের তুলনায় তা বেশি। এই মাসে গতকাল পর্যন্ত আট দিন অস্বাস্থ্যকর, ১৫ দিন অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং চার দিন ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউ এয়ার সবচেয়ে দূষিত বায়ু সহ শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে। আইকিউ সূচকে স্কোর (সংখ্যা) ৫০ বা তার নিচে হলে বায়ুর গুণমান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ২০১ থেকে ৩০০ স্কোর অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বায়ুর গুণমান নির্দেশ করে এবং ৩০১-এর উপরে স্কোর একটি বিপজ্জনক অবস্থা নির্দেশ করে।
গত মাসে বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের ঢাকা শহরের পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণ পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময়ে (৩১৭ দিন) ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্মল বায়ুর মান থেকে খারাপ। . শীতকালে ঢাকার বাতাস স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি দূষিত হয়। গবেষণায় জানা গেছে, বছরের অর্ধেক ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বাতাস শাহবাগ এলাকায় থাকে। বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দূষিত হয় মিরপুরের বাতাস। বর্ষা-পরবর্তী সময়ে তেজগাঁওয়ের বাতাস সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়।
দূষণে কুমিল্লাগা ঢাকাকে হার মানছে: ৩ জানুয়ারী, ২০২১, ক্যাপস ৬৪টি জেলার বায়ু দূষণ জরিপ ২০২১ উপস্থাপন করেছে। ওই জরিপে ৩৪টি দূষিত জেলার তালিকায় কুমিল্লার নাম ছিল না। ২০১৯ সালের জুনে, পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, কুমিলগা দেশের সবচেয়ে কম দূষিত জেলা। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে সারা বিশ্বকে ছাড়িয়ে এ শহরের সুস্থ বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মাসে চার দিনে কুমিলগড়ের নাম বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় চারবার উঠে এসেছে।
আইকিউ এয়ারের মতে, ৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার আইকিউ স্কোর ছিল ২৬৫ পিপিএম। ৬ ফেব্রুয়ারি ছিল ২৮১ পিপিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ২৮৯ পিপিএম। ২২ ফেব্রুয়ারি, রাজধানী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ১৬৪ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে ছিল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিলগা অঞ্চলের সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ও ইট সরবরাহ, ভবন নির্মাণ, রাস্তার ওপর মাটি-বালি-ইট-সিমেন্ট ফেলে রাখা, যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা। এবং ঘন জনসংখ্যা। বায়ু দূষণের তালিকায় নাম শীর্ষে থাকার বড় কারণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ু দূষণ গবেষক ড. আবদুস সালাম বলেন, আদালত বিভিন্ন সময় বায়ু দূষণের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। কিন্তু আদালত এসব নির্দেশ দিলে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু তৎপর থাকে না। কিছু দিন পর আবার ঘুমিয়ে পড়ল। পরিবেশ অধিদপ্তরকে এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বায়ু দূষণ এখন এই রাজ্যে একটি বড় সমস্যা।