• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করার দাবি

    ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে তদন্ত কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। দেশব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এই মহান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

    জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করে এসব আয়োজন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এবং স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করার শপথ লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে।

    সূর্যোদয়ের মুহূর্তে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। দেশের সব মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা, মিলাদ, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ছাপানো হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এবং সরকারি ছুটি ছিল।

    রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার ও জাতির পিতাকে অভিবাদন জানায়। বিউগল একটি শোক নোট ধ্বনি. সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাতির পিতাসহ ৭৫ জন শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আবারো দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

    বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক নিদর্শন বঙ্গবন্ধু ভবনে যান। সেখানে ঘুরে দেখেন স্মৃতিচিহ্ন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভবনের একটি কক্ষে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন এবং শহীদদের জন্য দোয়া করেন।

    শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মাহবুবুল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ডা. হাসান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম প্রমুখ। , অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, ডাঃ আবদুস সোবহান গোলাপ, আমিনুল ইসলাম আমিন, সায়েম খান প্রমুখ।

    পরে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গিয়ে মা ও ভাইদের নিয়ে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। সেখানে ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবরস্থান মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার ও জাতীয় স্যালুট প্রদান করা হয়। বিউগল একটি শোক নোট ধ্বনি. পরে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

    তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্তু হত্যার মূল হোতা জিয়াউর রহমানের বিচার হয়নি। জাতির প্রত্যাশা একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় এনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানার মুখোশ উন্মোচন করা। সে লক্ষ্যে বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে কাজ করছে সরকার।

    এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ ও বনানী কবরস্থান সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উভয় স্থানেই শ্রদ্ধা জানাতে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদের হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা একে একে শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা শোক মিছিল করেন।

    মন্তব্য করুন