• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    জন্ম তারিখের প্রমাণ ছাড়া নিবন্ধন মিলবে না

    জন্ম নিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘ। সুখবর হলো, জন্ম নিবন্ধনের ঝামেলা কমাতে ১ আগস্ট থেকে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এখন থেকে জন্ম তারিখের যেকোনো প্রমাণ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করা যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় জন্ম নিবন্ধনের নতুন প্রক্রিয়াকে ‘সহজ’ দাবি করলেও বাস্তবে ভোগান্তি রয়ে গেছে।

    গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে জন্ম নিবন্ধনের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেমন, সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে বাবা-মায়ের জন্ম সনদ নিতে হতো। সেই সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ এবং আরও অনেক কিছু সংযুক্ত করতে হতো। তালাকপ্রাপ্ত বাবা-মায়ের সন্তানরা বেশি সমস্যায় পড়েছিল। এসব প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের জন্ম নিবন্ধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব শর্তের কারণে জন্ম নিবন্ধন অফিসগুলোতে অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে। উটকোচ ছাড়া নিবন্ধন সম্ভব ছিল না।

    তবে রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারেক হিকমত বলেন, নানা শর্তে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসব শর্ত দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল দেশের সব মানুষের জন্য একটি শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরি করা। তা করতে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন নিয়েও তৈরি হয়েছে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র। এখন এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে কেউ জন্মতারিখসহ সব তথ্য রাখতে পারবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবে। যদি কেউ পুরো টাকা দিতে না চায়, তাহলে শুধুমাত্র একটি জন্মের প্রমাণ যেমন টিকা দেওয়ার শংসাপত্র বা হাসপাতালের ছাড়পত্র দিয়ে শিশুর জন্ম শংসাপত্র পেতে পারেন।

    কীভাবে নিবন্ধন করবেন: রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের ওয়েবসাইটে (http://www.orgbdr.gov.bd/) প্রবেশ করে ‘আমাদের পরিষেবা’ আইকনে ক্লিক করলে, ‘জন্ম নিবন্ধন’ নামে একটি পরিষেবা ট্যাব প্রথমে উপস্থিত হবে। এটিতে ক্লিক করুন এবং একটি আবেদন ফর্ম প্রদর্শিত হবে। যে কেউ এটি পূরণ করে, ডাউনলোড করে এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে জন্ম সনদ পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে জন্মের উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করতে হবে।

    কোনো প্রচারণা নেই: সন্তানের জন্মের পর তার প্রকৃত জীবন শুরু হয় জন্ম নিবন্ধন দিয়ে। জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে জানানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় কখনোই কোনো প্রচারণা চালায়নি। গত ১ আগস্ট থেকে নতুন নির্দেশনা জারি হলেও গণমাধ্যমে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। কর্তৃপক্ষ তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায়িত্ব পরিষ্কার করেছে।

    ফলে নিবন্ধন কাজের সঙ্গে জড়িত অনেক স্থানীয় সরকারি কর্মী নতুন এই নির্দেশনা জানেন না। এক সপ্তাহ পার হলেও জন্ম নিবন্ধনের জন্য যারা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে পুরনো নথি দাবি করছেন নিবন্ধকরা। এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারেক হিকমত বলেন, তাদের জনবল সংকট। প্রধান কার্যালয়ে ২০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। অনেকে আবার কাজও বুঝে না।

    দুর্নীতি বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেই: জন্ম সনদ প্রক্রিয়া সহজ করার নির্দেশনা জারির পর দুর্নীতি খুব একটা বন্ধ হবে বলে মনে করে না রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস। কারণ হিসেবে মির্জা তারেক হিকমত বলেন, ওয়েবসাইটে না গিয়ে দালালের মাধ্যমে আবেদন করা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যাইহোক, আপনি যখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন এবং আবেদন করেন, যখন আপনি প্রয়োজনীয় শংসাপত্র সংযুক্ত করেন, আপনাকে ফর্মটি পূরণ করতে অন্য কারও কাছে যেতে হবে না।

    ওয়েবসাইট দুর্বলতা: অনেকে অভিযোগ করেছেন যে যখনই তারা জন্ম নিবন্ধন লিঙ্কে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন তখনই রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের ওয়েবসাইট ব্যর্থ হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলেও সার্ভার ডাউন বলে জানানো হয়। সাইটে প্রবেশ করার সময় ইংরেজিতে লেখা হয়, ‘This site can’t be reach’। তারপর এটি ‘রিলোড’ বলে। রিলোড বাটনে ক্লিক করার পরও কাঙ্খিত আবেদনপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এই প্রতিবেদক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এই ছবিটি পেতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে মির্জা তারেক হিকমত বলেন, একই সঙ্গে অনেক মানুষ সার্ভারে হিট করলেই সমস্যা হয়। এটিকে আরও আধুনিক করার চেষ্টা চলছে।

    মন্তব্য করুন