জাতীয়

জনসমাগম ঠেকাতে হরতাল, সিলেটে দুর্ভোগে মানুষ।আজ বিএনপির গণসমাবেশ

খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুরের ‘রিপ্লে’ চলছে সিলেটে। বিএনপির গণসমাবেশে ‘যথাযথাই গণসমাবেশ ঠেকাতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে’ বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিলেটেও মাসব্যাপী এ কৌশল মোকাবেলায় আগাম ও বিকল্পধারায় সমাবেশস্থলে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জনসমাগম ঠেকাতে ও জমায়েত বাড়ানোর পাল্টাপাল্টি এই প্রচেষ্টায় ‘উলুখাগড়া’ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাস না চলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তবে সিলেটের পাশাপাশি খুলনা, রংপুর ও বরিশালের ব্যতিক্রম হলো, বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো পাহারা, মহড়া বা বাধা নেই। সিলেট নগরীতে প্রবেশ পথে কোনো পুলিশি তল্লাশি চৌকি নেই; যা বিএনপির আগের বিধানসভা সিটিগুলোতে ছিল।

এমতাবস্থায় শনিবার সকাল ১১টায় পূণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির গণসভা শুরু হবে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরের পর এটি দলের সপ্তম বিভাগীয় কর্মসূচি। এতে যোগ দিতে শুক্রবার রাতে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা।

ধর্মঘটে মানুষের ভোগান্তি : বাস মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী, সিলেটে বিএনপির সমাবেশের দিন শনিবার সকাল ৬টা থেকে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘট চলবে।

গতকাল দুপুরে কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখেন গাড়ি চলছে না। ঢাকা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ রুটের একটি বাসও ছেড়ে যায়নি। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ রুটের বাসও চলেনি। ফলে সড়কপথে সিলেট দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় গতকাল সকাল থেকে দুই দিনব্যাপী ধর্মঘট শুরু হয়েছে। হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। আব্দুল হক নামের এক যাত্রী জানান, চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার তিনি সিলেটে আটকা পড়েছিলেন। হবিগঞ্জে ফিরতে পারছেন না। জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশের দাবি, আগেভাগে ধর্মঘট ঘোষণার কারণে যাত্রী কম, ভোগান্তিও কম।

মুসল্লিদের দুর্ভোগ: আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা। গতকাল সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ মহাসড়কের পারাইচক এলাকার ট্রাক টার্মিনালে অনুষ্ঠিত এ ইজতেমার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ৩০-৪০ হাজার মানুষ। যান চলাচল বন্ধ থাকায় ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন জেলার পুণ্যার্থীরা। তবে আঞ্জুমানের আমিরের ছেলে মাওলানা সাদ আমিন বর্ণভী বলেন, মুসল্লিদের বেশির ভাগই সিলেটের বাসিন্দা। সবাই ফিরে গেছে।

ক্ষমতাসীন দল নীরব : আগের দিন ছাত্রলীগের মোটরসাইকেল মহড়া দেখা গেলেও গতকাল ক্ষমতাসীন দলের তৎপরতা দেখা যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশে কেউ বাধা দিচ্ছে না, বরং সহযোগিতা করছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে বাধা দেওয়া হবে না। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই নেতা।

পুলিশের কোনো বাধা নেই : গতকাল সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পুলিশের কোনো তল্লাশি বা বাধা নেই। তবে মৌলভীবাজার পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব সৈয়দ এবায়দুল হোসেন অভিযোগ করেন, কুলাউড়া স্টেশনে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। আহত হয়েছেন তিন নেতাকর্মী। আহতরাও সমাবেশে আসেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ইতিমধ্যেই জনসভার মাঠ পূর্ণ: হরতাল হবে বলে জানা যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ দখল করতে শুরু করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কর্মীদের রাত কাটানোর জন্য জেলাভিত্তিক ক্যাম্প ও মাঠে তাঁবু তৈরি করেছে বিএনপি। কিন্তু সেখানে জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে শীতের রাত কাটাচ্ছেন অনেকেই। টয়লেট ও ​ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে চলছে ঘুম আর খাওয়া-দাওয়া। নেতাকর্মীরা গান আর স্লোগানে সময় কাটাচ্ছেন। গতকাল বিকেলে মাঠে ১০ হাজার মানুষের জন্য মোরগ মুরগি রান্না করা হয়। দিনভর বিএনপি নেতাকর্মীরা ট্রেন, নৌকা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকে ও পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে আসেন।

মন্তব্য করুন