ছয় ব্যাংকের টাকা লুটে মন্টেনিগ্রোয় পাঁচতারকা হোটেল
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল আলীম চৌধুরী। তিনি ইউরোপীয় দেশ মন্টিনিগ্রোতে শেরাটন এবং ওয়েস্টিনের ফোর পয়েন্ট নামে পরিচিত দুটি পাঁচতারা হোটেলগুলিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। ৬ কোটি ইউরো বা প্রায় ৬০৩ কোটি বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয় করা দুটি হোটেল ছাড়াও তিনি সেখানে আবাসন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। শুধু তাই নয়, মন্টিনিগ্রোয় তাঁর বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি সেখানে ক্ষমতাধর লোকের উপস্থিতি দেখাগেছে। উপস্থিত থাকেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রীও। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এই বিশাল বিনিয়োগের অর্থের উত্স অনুসন্ধান করেছেন। তদন্ত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আবদুল আলীম চৌধুরী মূলত বিদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া অর্থ পাচার করে এই বিনিয়োগ করেছেন।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, দেশের মোট ছয়টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) প্রায় ৪১৬ কোটি টাকার দেনা রয়েছে আবদুল আলিম চৌধুরীর। খেলাপি হয়ে পড়া এ ঋণের অর্থ আদায়ে তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৬ হাজার ৫২৫ টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ৫৯ কোটি ৭১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪০, ব্র্যাক ব্যাংকে ৩১ কোটি ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ১০৫, হাবিব ব্যাংকে ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ১৭ হাজার ৩৬৯, প্রাইম ব্যাংকে ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫ হাজার ৪০৫, ব্যাংক এশিয়ায় ৩৬ কোটি ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৪ টাকা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ১৯২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণ খেলাপ করেছেন তিনি। আবদুল আলিম চৌধুরীর নামে এ সাত ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের করা মোট ১৯টি অর্থঋণ মামলা ও ১৭টি চেকের মামলা চলমান।আবদুল আলীম চৌধুরী ঋণখেলাপের অভিযোগে দেশের অর্থঋণ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও বিদেশে বড় ব্যবসায়ী হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। মন্টিনিগ্রিন সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ এআরএনএন গ্রুপের প্রধান আবদুল আলীম চৌধুরী একটি পাঁচতারা হোটেল সংস্থার সাথে চুক্তি করেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় পর্যটনমন্ত্রী এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, অন্যদিকে মন্ট্রিলভিত্তিক গ্লোবাল সিটিজেনশিপ ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরি কোম্পানি আরটন ক্যাপিটালের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, মন্টেনিগ্রোয় ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) ইউরোয় নির্মিয়মাণ ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটন ও ওয়েস্টিন হোটেল নির্মাণে বিনিয়োগ করছে এআরএনএন গ্রুপ নামে একটি বিদেশী কোম্পানি। ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মন্টেনিগ্রোর প্রধানমন্ত্রী মিলো দুকানোভিচ এ নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। মন্টেনিগ্রোর প্রধানমন্ত্রী যখন প্রকল্পকাজ পরিদর্শন করেন, এআরএনএন গ্রুপের কর্ণধার আবদুল আলিম চৌধুরী তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলেন।চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ী বিদেশে বিনিয়োগের অর্থের উত্সের তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে ২০০৭ সালে আবদুল আলীম চৌধুরী চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জলাবদ্ধ ও নিচু জমি স্বল্প মূল্যে কিনেছিলেন। কয়েক গুণ দাম বেশি দেখিয়ে জমিগুলোর বিপরীতে ঋণ নেয়া শুরু করেন তিনি। পরে ঋণের টাকা নিয়ে তিনি আরও ব্যয়বহুল জমি কিনে আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে শুরু করেন। যদিও সেই সময়ে কোনও দৃশ্যমান ব্যবসা ছিল না, তবুও ব্যাংকগুলি তার সম্ভ্রান্ত আচরণ এবং গ্ল্যামারের কারণে তাকে ঋণ দিতে দ্বিধা করেনি।আবদুল আলীম চৌধুরী বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, দেশে তার দখলে অর্থের খুব বেশি সন্ধান নেই। তবে তিনি যে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, আয়কর নথিরও এ সম্পর্কে কিছু ধারণা রয়েছে।