• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ছায়ার হাওরে বাঁধ ভেঙেছে, তিন জেলার ফসল তলিয়ে যাচ্ছে

    মৌতী বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, নেত্রকোনার কালিয়াজুরী, কিশোগঞ্জের মদন, ইটনা ও সুনামগঞ্জের মিঠামিন উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক তলিয়ে গেছে।

    হাওরের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ৪,৬৩৭ হেক্টর জমির পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার বোরো জমি রয়েছে।

    শাল্লা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু এ তথ্য জানান।

    তিনি বলেন, এই হাওরের বেশির ভাগ জমি শাল্লা উপজেলার। কিছু জমি কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামিনের এবং কিছু জমি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার। প্রায় অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। বাকি অর্ধেক ফসল কাটা বাকি। এ অবস্থায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসি নির্মিত বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। বাঁধ ভাঙ্গার এ দৃশ্য দেখে হাজার হাজার কৃষক তাদের অবশিষ্ট জমির ধান কাটতে হাওরে নামেন।

    কৃষকদের মতে, ২২ লাখ টাকার প্রকল্পটি সভাপতি হিসেবে অকৃষক কৃপেন্দ্র দাসকে দেওয়া হয়েছিল। পিআইসি সভাপতি কৃপেন্দ্র সিলেটে অবস্থান করছেন। তিনি কৃষকও নন। তাই বাঁধের কাজে নানা দুর্বলতা ছিল। এ দুর্বলতার কারণে বাঁধ ভেঙে হাওরের অবশিষ্ট জমি তলিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা।

    হাওর বাঁচাও আন্দোলন শাল্লা উপজেলা সভাপতি তরুণ কান্তি দাস বলেন, রোববার সকালে মৌতী বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে। যেভাবে বাঁধ ভেঙেছে, এর আগে কখনও বাঁধ ভাঙেনি। এছাড়াও শনিবার সন্ধ্যায় কয়েকজন পিআইসি সভাপতি কৃপেন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাসকে বেঁধে বুরুঙ্গার কথা জানায়। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। রাতে তাদের বাঁধও ছিল না।

    তিনি আরও বলেন, রোববার সকালে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবাহ শুরু হলে মাইকে চিৎকার করলে বাঁধ বন্ধ করা যেত।

    তার মতে, হাওরের ৩০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হবে। তবে কৃষকের ক্ষতি হবে ৫০ শতাংশ। কারণ তারা ধান কেটে জমিতে ফেলে রেখেছে। এ ধান তুলতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হবে হাজার হাজার কৃষককে। দুই দিনের মধ্যে হাওরে পানি আসবে। তখন তারা অসহায় হয়ে পড়বে।

    তবে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব দাবি করেন, হাওরে ৯০ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হয়েছে। শনিবার রাত ১১টায় কালবৈশাখী চলছিল। সে সময় তদারকি করার মতো কেউ না থাকায় বাঁধ ভেঙে যায়।

    এর আগে গত ২১ এপ্রিল সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুরে দুটি বাঁধ উপচে প্লাবিত হয় হাওর। এর মধ্যে দিরাই জেলার অন্যতম বৃহৎ হাওর বরম। হাওরপাড়ের চন্ডিপুর-খেজাউড়ার মধ্যভাগ দিয়ে কালনী নদী বয়ে গেছে। এ হাওরে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়।

    একই দিন জগন্নাথপুর, ছাতক ও শান্তিগঞ্জের মধ্যবর্তী এলাকায় ছোট হাওর দাড়াইয়ে পানি ঢুকেছে। উপচে পড়েছে হাওরের পাশের কুচিয়া খাল। স্থানীয়ভাবে এই হাওরকে পাথরের হাওর বলা হয়। এ হাওরের বেশির ভাগ ধান কাটা হয়নি।

    সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বুধবার পর্যন্ত বরম হাওরের ৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে তিন হাজার হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। পাথরের হাওরের ২০ হেক্টর জমির বেশির ভাগ খালি হয়ে গেছে। দুই হাওরে এখনো ধান কাটা হচ্ছে।

    নদীর পানি কমে যাওয়ায় অসময়ে নির্মিত অধিকাংশ হাওর রক্ষা বাঁধ হয় ভেঙ্গে যায় বা চুইয়ে হাওরে পানির প্রবাহ বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ কমছে না। জমির পরিপক্ক ধান কম সময়ে কাটতে হয় এবং মেঘলা আবহাওয়ায় ধান শুকাতেও বিলম্ব হয়। এ অবস্থায় বাঁধের কাজে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

    গত ২১ এপ্রিল সুনামগঞ্জের হাওর পরিদর্শনকালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, আগাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নৌ চলাচলের সুবিধার্থে সরকার সুনামগঞ্জে দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ নদী ড্রেজিং ও কজওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। এখন জরিপের কাজ চলছে।

    মন্তব্য করুন