• বাংলা
  • English
  • শিক্ষা

    ছাত্রলীগের র‌্যাগিংয়ের ঘটনার মীমাংসা করতে গিয়ে অবরুদ্ধ হন সহকারী প্রক্টর

    শনিবার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকরিবি) শাহজালাল হলে র‌্যাগিংয়ের ঘটনাটি সমাধান করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেনস্থা ও অবরুদ্ধ হন সহকারী প্রক্টর। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের প্রথমে হয়রানি ও পরে হামলা চালানো হয়।

    প্রত্যক্ষদর্শী ও হল সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে শাহজালাল হলের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে র‌্যাগ দেওয়া হয় ওই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি সুরাহা করতে রিজওয়ানুল হক (কনক) হলে যান শিক্ষার্থীর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও সহকারী প্রক্টর ডা. এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মোঃ কামরুল হাসান।

    এ নিয়ে প্রভোস্টের কার্যালয়ে আলোচনার একপর্যায়ে প্রভোস্ট ও সহকারী প্রক্টরের ওপর হামলা চালায় ওই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে কয়েকজন বিএলএ সহকারী প্রক্টরের দিকে ছুটে আসেন, তাকে গালিগালাজ করেন এবং অপমান করার চেষ্টা করেন। এ সময় সহকারী প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় হলের প্রভোস্টকে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

    খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ মাহির উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি হলে গিয়ে সহকারী প্রক্টর ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্ধার করেন। ওই ঘটনার পর সহকারী প্রক্টর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

    ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ৩ সাংবাদিক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন। এ সময় শাহজালাল হলের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হৃদয় খান (কুতুব) ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগের কর্মী সৌরভ চৌধুরী ও তার সহযোগীরা হয়রানি ও গালাগালি করে হল ত্যাগ করে।

    যে তিন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা হলেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর,।

    পরে বাকরিবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান এসে ওই হলের ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল শাকিলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল শাকিল। বিষয়টি মীমাংসা হলে দুপুর ১টার দিকে সাংবাদিকরা শাহজালাল হল থেকে নিজ নিজ হলের উদ্দেশে রওনা হন।

    নাজমুল শাকিলের প্রকাশ্য সমর্থনে ওই হলের ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শহীদ শামসুল হক হলের সামনে এসে দৈনিক এশিয়ান এজ পত্রিকার প্রতিনিধি আতিকুর রহমানসহ হয়রানির শিকার ৩ সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায়।

    শাহজালাল ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হৃদয় খান (কুতুব), দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ ইকবাল, জিসান মাহমুদ ও নাঈম উদ্দিনসহ হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। হামলার সময় তারা ক্যাম্পাস লাইভ ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক রায়হান আবিদের সাইকেল ও মোবাইল ফোন ভাঙচুর করে। পরে আহত চার সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

    ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ নাজমুল আহসান হলের গেস্টরুমে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তাইফুর রহমান রিয়াদ। রাত ২টার দিকে শহীদ শামসুল হক হলের সামনে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

    পরে ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মুহাম্মদ মাহির উদ্দিন। বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রক্টর। এ সময় সেখানে দুই সহকারী প্রক্টরও উপস্থিত ছিলেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

    রিজওয়ানুল হককে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় সহকারী প্রক্টর ডা. পরে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি (সহকারী প্রক্টর) বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। হলের ঘটনার পর তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

    সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রাকিবুল হাসান বলেন, এ হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার বিষয়। তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। দোষীদের বিচারের আওতায় না আনায় প্রশাসনের রহস্যময় নীরব ভূমিকার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অপ্রীতিকর ঘটনা।

    শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, হলটিতে র‌্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সহকারী প্রক্টর আমাকে না জানালে আমার সামনে এ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। তবে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থাকতে পারে।

    মন্তব্য করুন