চূড়ান্ত হচ্ছে নীতিমালা।নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা দিয়ে পার্কিং, রাস্তার সব জায়গায় নয়
ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ পার্কিং। এটা বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কিছু পরিবর্তনের সাথে ২০১৯ খসড়া নীতি চূড়ান্ত করছে। তিন বছর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ পার্কিংয়ের জন্য কয়েকটি সড়ক আলাদা করে দিলেও তা সফল হয়নি। ডিটিসিএ ব্যস্ত এলাকায় টাকার বিনিময়ে পার্কিং দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছে। ডিটিসিএ নীতি চূড়ান্ত করতে গত সপ্তাহে স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করেছে। কোম্পানির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার বলেন, আগের খসড়ায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নীতিমালা চূড়ান্ত করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, পার্কিং নীতির খসড়া এখনো মন্ত্রণালয় পায়নি। প্রাপ্তির পর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অনুমোদন দেওয়া হবে।
খসড়া নীতিমালার উদ্দেশ্য অনুযায়ী সরকারি, কর্পোরেট ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করা হবে। পার্কিং ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
খসড়া অনুসারে, নীতিটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং বৃহত্তর ঢাকা অর্থাৎ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলার জন্য ডিটিসিএ অধিক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য। এইসব এলাকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নীতি অনুসরণ করে পার্কিং পরিষেবা দেবে।
খসড়া অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজউক রাজধানী এলাকায় পার্কিংয়ের জায়গা চিহ্নিত করবে। বহুতল এবং ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট নির্মাণ করা যেতে পারে। ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট নির্মাণের ক্ষেত্রে, নির্মাণ করা জমির সুবিধা বজায় রাখতে হবে।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসা প্রাইভেটকার। নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিং সুবিধা রাখার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, কারখানা, নৌ, বাস ও বিমানের টার্মিনালে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্যারেজ ভাড়ার প্রতি মাসে ৬৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজধানীতে রাতের যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের পাশে বাস ও ট্রাক রাখা। নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বাস ও ট্রাকসহ বাণিজ্যিক যানবাহনকে রাতে রাস্তায় পার্ক করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। জরুরী পরিস্থিতিতে রিকশা এবং ভ্যানের মতো অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য পার্কিং স্থানগুলিও চিহ্নিত করা উচিত। শুধুমাত্র স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্ধারিত রাস্তায় গাড়ি পার্ক করা যাবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মেট্রো রেল ও রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীরা এখানে তাদের গাড়ি পার্ক করবেন এবং গণপরিবহন তাদের গন্তব্যে নিয়ে যাবে। ডিটিসিএ, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি সুপারিশ করবে যে রাস্তাগুলি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ ‘অন স্ট্রিট পার্কিং’ স্পেস নির্ধারণ করবে কমিটি।
পার্কিং সুবিধার জন্য ইজারাদার, ঠিকাদার নিয়োগ করা যেতে পারে। তারা কর্তৃপক্ষের তরফে গাড়ি থেকে ফি আদায় করবে। স্বচ্ছ পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন। অব্যবস্থাপনা এবং অযোগ্যতার জন্য তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তবে কী শাস্তি দিতে হবে তা নীতিমালায় বলা হয়নি।
রাজধানীর অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে পার্কিংয়ে অবৈধভাবে দোকানপাট ও ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। রাজউক মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। নীতিমালায় বলা হয়েছে, এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
নীতিটি এমন এলাকায় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্কিং লট নির্মাণকে উৎসাহিত করে যেখানে পার্কিং উপলব্ধ নেই। মালিকরা জনবহুল এলাকায় আবাসিক এবং বাণিজ্যিক প্লটে পার্কিং লট ভাড়া নিতে সক্ষম হবেন।
নীতিতে বলা হয়েছে যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পার্কিং ফি নির্ধারণ করবে। তবে শহরের বিভিন্ন স্থানের গুরুত্ব অনুযায়ী তা আলাদা হবে। বহুতল পার্কিং লটটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক করতে ৫০০মিটারের মধ্যে কেউ তাদের গাড়ি রাস্তায় পার্ক করতে পারবে না। নগদ অর্থ প্রদান ছাড়াই ‘পার্কিং চার্জস ব্যারিয়ার’-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফি সংগ্রহ করা যেতে পারে। নীতিমালা বাস্তবায়নে রাস্তা ও ফুটপাতে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে গাড়ি পার্কিং করলে তা জব্দ করার ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।