চিকিৎসা সেবায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর সরকার
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও বাণিজ্য ও ভোগান্তি দূর করতে অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযান শুরু করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। চিকিৎসকদেরও উন্নত প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া অবৈধ হাসপাতালে নিবন্ধিত চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না। প্রাইভেট হাসপাতালের মূল্য নির্ধারণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়াও চলছে। এ খাতের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রোগীর হয়রানি ও ভোগান্তি কম।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির বলেন, প্রথমে নিবন্ধিত হাসপাতালের তালিকা তৈরি করা হবে। এরপর তাদের সেবার মান বাড়ানোর কাজ করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি বা অসম্পূর্ণ আবেদন জমা দেয়নি সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেবার মানের জন্য নিবন্ধিত হাসপাতালগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। এ, বি, সি- এই তিন ক্যাটাগরির তালিকা তৈরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। যাতে মানুষ জেনেশুনে চিকিৎসা নিতে পারে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য আলাদা মহাপরিচালক পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ ক্লিনিকে নিবন্ধিত চিকিৎসকরা সেবা দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মূল্য ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। নির্ধারিত চার্জ সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রদর্শন করতে হবে। সেখানে প্রতিটি সেবার মূল্য উল্লেখ থাকবে। এগুলো একটি বোর্ডে টানা হবে, যা সরকারি হাসপাতালে রয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৮২ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে সারাদেশে ১৮ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ব্লাড ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকায় রয়েছে ১৫ হাজার। গত তিন মাসে বন্ধ হয়েছে ১ হাজার ৬৪২টি। নতুন নিবন্ধনের জন্য দুই হাজার প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। প্রায় ৩০০০ কোম্পানি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেছে। ১ হাজার ৪৮৯টি নতুন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সরকারের রাজস্ব প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি বছর তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তা মানছে না। রেজিস্ট্রেশন (লাইসেন্স নবায়ন) হালনাগাদের চাপ সত্ত্বেও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো কর্ণপাত করে না। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারা পরিচালিত নবায়ন ছাড়াই কয়েক হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলছে জমজমাট ব্যবসা। এবার এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে সরকার।
অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে গতকাল বিকেলে দেশের সব সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সকল বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও সিভিল সার্জনদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজ নিজ জেলায় অনিবন্ধিত, অবৈধ ও অনিয়মিতভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা সিলগালা করে মহাপরিচালককে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মাস পর সোমবার থেকে ফের অভিযান শুরু করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। ৯৬ ঘণ্টার অপারেশনের পর শুক্র ও শনিবার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জনগণের জীবন নিয়ে খেলা হতে দেওয়া হবে না। জনগণ যাতে প্রতারিত না হয়, জনগণ যাতে সঠিক মূল্যে চিকিৎসা সেবা পায় এবং সঠিক মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় সে জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করব।
জানতে চাইলে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, একটি টাস্কফোর্স কমিটির মেয়াদ থাকে ৬ থেকে ৯ মাস। এই সময়ের মধ্যে, আমরা দেশের স্বাস্থ্যসেবার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।