জাতীয়

চামড়া খাতের ৩৯ শতাংশ ঋণ খেলাপি

চামড়া খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ রয়েছে ১৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। যা এ খাতের মোট ঋণের প্রায় ৩৯ শতাংশ। পুরো ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ৯ শতাংশ। চামড়া খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে চিরতরে শিথিল শর্তে নতুন ঋণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক সময় পুরনো ঋণ নবায়ন করা হয়। এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এখন বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি।

ব্যাংকাররা বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে চামড়া শিল্পনগরী হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। জটিলতার মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদারের ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। ব্যাংক ও বহিরাগত নিরীক্ষকদের সাথে যোগসাজশে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে এবং ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তার নামে জনতা ব্যাংক থেকে ১,১১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনতা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা কেটে নেয়। আর্থিক বছর ২০১৭-১৮ এবং এটি সরকারি কোষাগারে জমা করে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, চামড়া খাত দীর্ঘদিন ধরে সংকটে রয়েছে। এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত সনদ নেই। ফলে অনেক ব্র্যান্ডই এসব কোম্পানির পণ্য কিনতে চায় না। আবার বিশ্ববাজারে চামড়া রপ্তানিতে ধস নেমেছে। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান সময়মতো ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চামড়া খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদারের পাঁচটি কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, যার সবগুলোই অনেক আগেই খেলাপি। তবে, অনাদায়ী সুদ যোগ করা হলে, ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছে ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ অনেক বেশি। ক্রিসেন্ট গ্রুপ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ১৯৯০-এর দশকে মূলত বিতরণ করা চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার চামড়া খাতের ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে। গত বছর ঈদুল আজহার আগে ঋণ নবায়নে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল যাতে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারে এমন কোম্পানিগুলোও চামড়া কেনার জন্য ঋণ নিতে পারে। এর আগেও ২০২০ সালে, চামড়া খাতের ঋণে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সহ ১০ বছরের জন্য সুদ মওকুফ, ঋণ পুনর্গঠন এবং পুনর্নির্ধারণ বা প্রস্থান সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

এবার ঋণের পরিমাণ ২৩৫ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ব্যাংকগুলো ঋণ কমিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক এবার ২৩৫ কোটি টাকা ঋণ দিতে প্রস্তুত। গত বছর তা ছিল ২৪৫ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালে, করোনার আগের বছর, এই ব্যাঙ্কগুলি চামড়া কেনার জন্য ৫৫৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এবার জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি, অগ্রণী ৮০ কোটি, রূপালী ৩০ কোটি ও সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা ঋণ দিতে প্রস্তুত। তবে এ পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে কিনা সন্দেহে রয়েছে ।ব্যাংকগুলো। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সিটি, বেসিক, বাংলাদেশ কমার্স, এনসিসি, আল-আরাফাহ ব্যাংক নির্দিষ্ট গ্রাহকদের চামড়া কেনার জন্য ২৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে।

ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে শুধু নিয়মিত ব্যবসায়ীরাই চামড়া কিনতে ঋণ পান। তবে শেষ সময়ে কেউ এসে নবায়ন করলে তাকে ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই এখনো নবায়নের জন্য আসেননি। ফলে বরাদ্দকৃত পুরো টাকা ঋণ দেওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তারা জানান, চামড়া কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হয় ৯ মাসের জন্য। তবে আশানুরূপ পারফরম্যান্স না হওয়ায় আগের মতো ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না ব্যাংকগুলো। চামড়ার দাম অনেক কমে যাওয়ায় আগের মতো ঋণের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে চামড়া কেনার জন্য অনেকে ঋণ খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো খুবই সতর্ক। এসব কারণে দেশে প্রতি বছর কোরবানির পশুর সংখ্যা বাড়লেও ঋণের পরিমাণ কমছে।