চলমান কর্মসূচি পালনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি
চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। আগামীতে সরকারের পদত্যাগের জন্য এক দফা আন্দোলনের আগে মাঠে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলের হাইকমান্ড। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ দেশের বিভিন্ন মহানগর ও জেলা পর্যায়ের শতাধিক থানা ও উপজেলা কমিটির নিন্দা জানিয়েছে দলটি। যেসব ইউনিট ও সংগঠন বা নেতারা কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হবেন এবং ভবিষ্যতে অনুপস্থিত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সবার জন্য একই নিয়ম কার্যকর করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই নির্বাচনের আগে আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়া বিএনপি এবার কর্মসূচি বাস্তবায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে শোকসন্তপ্ত কমিটিকে নিজেদের ব্যাখ্যা দিতে বলেছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। একইভাবে যেসব থানা-উপজেলা কমিটি দায়সারা কর্মসূচি পালন করতে দলের কাছে হাজির হয়েছে তাদেরও সতর্ক করা হয়েছে। এই সতর্কতা মৌখিকভাবে উচ্চারিত হয়। আগামীতে মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একাধিক থানা কমিটিকে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তবে দলটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কয়েকটি কমিটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও কোনো অভিযোগ আসেনি।
বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ ও সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে রমজান মাসে ১০ দিনের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। উজ্জীবিত দলের নেতা-কর্মীরা। ১ এপ্রিল থেকে দলটি সারাদেশে সব সংগঠিত শহর ও থানা, জেলা ও উপজেলা ও ইউনিয়নে ৯ দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। গত ৬ এপ্রিল সারাদেশের সব থানা ও উপজেলায় দুই ঘণ্টার একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। দশ দফা সম্বলিত ‘বুকলেট’ ছাড়াও প্রচারণায় সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। তৃণমূলের এসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দল গঠন করা হয়। অনুষ্ঠান সমন্বয়ের জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সচিব ও সহ-সাংগঠনিক সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার আগে নিজেদের শক্তি প্রমাণ ও নেতা-কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে একই সময়ে এসব কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয় দলের সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো। বিশেষ করে থানা ও উপজেলা পর্যায়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দলের হাইকমান্ড। ওইদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ ১৩ নগরীর ১২৮টি থানা এবং ৫০০ উপজেলার ৬৫০টি স্থানে একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। তবে শত শত থানা ও উপজেলা গণ অবস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষ নেতাদের ওইসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। উপজেলা কর্মসূচিতে পৌর ইউনিটের নেতা-কর্মীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, অনশন ও বাতিক ছাড়াও সরকারি দল ও প্রশাসনের বাধার অজুহাতে স্থানীয় নেতারা কর্মসূচি পালন করেননি।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রায় আটটি থানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেনি। দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম যাচাই-বাছাই করে দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেন নেতারা। আগামীতে সরকারকে পতনের জন্য এক দফা আন্দোলনের ওপর জোর দিয়ে এখনই তৃণমূলে কড়া বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্মসূচী পালনে অবহেলাকারী আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।