চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের খারাপ অবস্থা কখন শেষ হবে?
জরাজীর্ণ লাইন, ঝুঁকিতে ১৩ টি সেতু। ৫মাসে ৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে
জরাজীর্ণ রেললাইন, মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু এবং পুরাতন লোকোমোটিভগুলির কারণে চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিলেট-আখাউড়া রেলপথটি বিশেষত আখাউড়া থেকে সিলেট যাওয়ার দুর্ঘটনার কারণে যাত্রীদের আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে গতকাল এই রুটে মালবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। গত বছরের ১৬ই আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য ৬টি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও শাস্তি হয়েছে তা শুনিনি। ২০১৯ সালে এই রুটে কমপক্ষে ২১ টি দুর্ঘটনা ঘটে। ২৩ শে জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বড়মচল এলাকায় সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি ধসে পড়ে গিয়েছিল। পাঁচজন নিহত এবং শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। এটি জানা যায় যে ছোট বা ছোট প্রতিটি দুর্ঘটনার তদন্ত হয় তবে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয় না। তারা বিভিন্ন প্রভাবের মাধ্যমে তার পার পেয়ে যায়।
পূর্ব রেলের প্রধান প্রকৌশলী মো: সবুকতগিন বলেন, চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের অবস্থা ভালো। আমরা গত বছর এই রুটে প্রচুর কাজ করেছি। স্লিপার হিসাবে কাজ করেছেন, রেলপথে কাজ করেছেন। এর মধ্যে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্রুতগতির কারণে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এবং আজ (গতকাল) যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল তা হ’ল আমাদের লোকেরা বিনা সংকেত ছাড়াই লাইনে কাজ করছিল। রেলওয়ে প্রকৌশল ও পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত দুর্ঘটনাটি গত বছরের ২ ডিসেম্বর হয়েছিল। এদিন দুপুরে মাধবপুরের শাহাজিবাজার রেলস্টেশনের কাছে একটি তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ কারণে সিলেটের সাথে রেলপথ যোগাযোগ ১৩ ঘন্টা বন্ধ থাকে। এর আগে ১১ ই নভেম্বর, সিলেট-মৌলভীবাজারের মাঝামাঝি ভাটেরাতে একটি মালবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে সিলেটের সাথে সারা দেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ৭ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলে সাতটি বগিযুক্ত একটি তেলবাহিত ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। রেল যোগাযোগ ২৩ ঘন্টা বন্ধ থাকে। এর আগে, ৩০ অক্টোবর জয়ন্তিকা ইমপ্রেস সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ডকইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে পাহাড়িকা ইমপ্রেসের সামনে ধাক্কা দেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও এলাকায় একটি তেলবাহী ট্যাংকারের বগি লাইনচ্যুত হয়। ২৩ আগস্ট কুলাউড়া এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। একই স্টেশনে গত বছরের ২৪ শে জানুয়ারী একটি ট্রেনের বগিতে আগুন লাগে। এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। শুধুমাত্র গত বছরের নভেম্বর মাসে এই রুটে ট্রেনটির তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে।
সিলেট রেলওয়ের একজন প্রকৌশলী বলেন যে তাঁর কর্মজীবনে তিনি এই রুটের মতো এত দুর্ঘটনা কখনও দেখেননি। রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-আখাউড়া বিভাগের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলির মধ্যে শমসেরনগর-টিলাগাঁও বিভাগের ব্রিজ নং ২০০, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও বিভাগের ব্রিজ নং ৪৩, ৪৫ এবং ৪৭, কুলাউড়ার ব্রিজ নং ৫ ও ৭ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। –
চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া এবং ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইনের অবস্থা বেশ ভাল। দ্বৈত গেজ লাইন আছে। তবে ট্রেনটি আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের রেল লাইনে চলছে। গত বছরের এপ্রিলে একনেক সিলেট-আখাউড়া রেলপথকে দ্বৈত গজে রূপান্তর করতে ১৬,১৪৪ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি ২০২৫সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।